আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আমরা সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব চাই, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। একসময় নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা চীনের সমর্থন পাইনি। কিন্তু চীনের জনগণ আমাদের বিরোধিতা করেছে, এর তো কোনো প্রমাণ নেই। ভারতের সমর্থন ছিল, আমাদের এক কোটি মানুষকে থাকার জায়গা দিয়েছে, যুদ্ধে তারা আমাদের অস্ত্র দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আমাদের সমর্থনে আনার জন্য কাজ করেছে। এজন্য ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আছে। ভারতের জনগণের প্রতি, ভারতবাসীর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আছে এবং থাকাটা তো দোষের কিছু নয়...

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি। তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন রাজনীতির জাতীয় মঞ্চে। গড়ে তুলেছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কৃষিবিদ হিসেবেও পরিচিত এ রাজনীতিক। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সহকারীও ছিলেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে টানা তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দলে থাকাকালীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কারাভোগও করেছেন।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, রোহিঙ্গা সংকট, ভূ-রাজনীতি এবং দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্ট ৪২ নাগরিকের অনাস্থার বিষয়ে নিজের মত ব্যক্ত করেন। বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চান বিশিষ্ট নাগরিকরা

আমরা কারও সঙ্গে বৈরিতায় বিশ্বাস করি না। চীনের প্রতি আমাদের আলাদা বিশেষ দরদ আছে, এরও কোনো প্রমাণ নেই

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

এছাড়া উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক ভারতের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব  পড়বে কি না— সে বিষয়েও দলীয় মনোভাব ব্যক্ত করেন বাহাউদ্দিন নাছিম। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

ঢাকা পোস্ট : দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে চীন। এর প্রভাব ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে পড়তে পারে কি না?

বাহাউদ্দিন নাছিম : আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতি হলো- জোট নিরপেক্ষ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। বর্তমান সরকার এ নীতির বাইরে গেছে কি? আমরা সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব চাই, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। একসময় নিকট প্রতিবেশী দেশ হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা চীনের সমর্থন পাইনি। কিন্তু চীনের জনগণ আমাদের বিরোধিতা করেছে, এর তো কোনো প্রমাণ নেই। ভারতের সমর্থন ছিল, আমাদের এক কোটি মানুষকে থাকার জায়গা দিয়েছে, যুদ্ধে তারা আমাদের অস্ত্র দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আমাদের সমর্থনে আনার জন্য কাজ করেছে। এজন্য ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আছে। ভারতের জনগণের প্রতি, ভারতবাসীর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আছে এবং থাকাটা তো দোষের কিছু নয়। কারণ, তাদের প্রায় ১০ হাজার সৈনিক জীবন দিয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে।

যারা ব্যর্থ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা প্রতিযোগিতায় পারেনি, যারা ষড়যন্ত্র করে টিকতে পারেনি, যারা মাঠে-ময়দানে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি, তারা তো কত কথাই বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আমাদের লাখো মানুষের ত্যাগের সঙ্গে তাদেরও ত্যাগ আছে। সেই ত্যাগের কথা আমাদের স্বীকার করতে তো দোষের কিছু নেই। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার যে দায়িত্ববোধ, সেই বোধটা আছে। তার মানে এই নয় যে, অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা করতে হবে। বর্তমান সময়ে কারও সঙ্গে বৈরিতা করে উন্নয়ন বা বাণিজ্যে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। এই প্রতিযোগিতায় আমাদের টিকে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেখানে যাকে পাওয়া যায়, ভুটানের মতো ছোট দেশের কাছ থেকেও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

বর্তমানে চীন বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকাটা দোষের কিছু নয়। তারা যদি আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশীজন হতে চায়, হতে পারে। একইভাবে ভারত, জাপান, কোরিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশও আছে। আমরা কারও সঙ্গে বৈরিতায় বিশ্বাস করি না। চীনের প্রতি আমাদের আলাদা বিশেষ দরদ আছে, এরও কোনো প্রমাণ নেই।

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : বাস্তবতাকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল। দলটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের যত অর্জন, বাংলাদেশ সৃষ্টি থেকে এবং সৃষ্টির আগে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই আওয়ামী লীগের সফলতা, অর্জনের ইতিহাস তো ব্যাপক। বলে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী লীগের মতো এত প্রাচীন, জনপ্রিয় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল এই উপমহাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কথা বলার তো অনেক লোক থাকবে।

স্থিতিশীল পরিবেশ, মানবিক শান্তির মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরে যে বিবেকের তাড়নাবোধ, সেটাকে জাগ্রত করতে হবে। সেটা কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

যারা ব্যর্থ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা প্রতিযোগিতায় পারেনি, যারা ষড়যন্ত্র করে টিকতে পারেনি, যারা মাঠে-ময়দানে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি, তারা তো কত কথাই বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। আমি শুধু একটা কথাই বলব, আওয়ামী লীগ তার চিন্তা-চেতনা-আদর্শের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আওয়ামী লীগ একটি প্রবহমান ও গতিশীল রাজনৈতিক দল। বাস্তবতার সঙ্গে, মানুষের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে। এই দলের গতিধারা ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকা পোস্ট : বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মানবিক উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে…

বাহাউদ্দিন নাছিম : মানবিক উন্নয়ন নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকতেই পারে। মানবিকতা তো জীবনের অংশ। কিন্তু দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, সেটা তো দৃশ্যমান হয়। মানবিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয় না। সেটা হয় একটি জাতির জাগরণের মধ্য দিয়ে। স্থিতিশীল পরিবেশ, মানবিক শান্তির মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরে যে বিবেকের তাড়নাবোধ, সেটাকে জাগ্রত করতে হবে। সেটা কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না?

বাহাউদ্দিন নাছিম : সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে রাতারাতি কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয় না। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক দল ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কাছে রিপাবলিকানদের চেয়ে ইতিবাচক কিছু আমরা আশা করতেই পারি। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক দলের সরকারের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় আছে— এরকম আমরা মনে করি না। বরং আমরা কিছু সুবিধা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে সেগুলোও ধীরে ধীরে সমাধান হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক দলের সরকারের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় আছে— এরকম আমরা মনে করি না। বরং আমরা কিছু সুবিধা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছি

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো, দেশটির নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করে আমাদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করব আমরা।

ঢাকা পোস্ট : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রশ্রয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষার জন্য আমরা কাজ করি। এটা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য, নীতি এবং আদর্শ। এজন্য আমাদের নেতাকর্মীদের অনেক ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। অনেক সময় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে।

ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায় তারা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এসে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলো শেখ হাসিনার সরকারের জনপ্রিয়তার বিপক্ষে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াতসহ ছোটখাটো কিছু রাজনৈতিক দল। ওই দুই শক্তির যে অবস্থান এটা কিন্তু পরিষ্কার। এরাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এই অপশক্তি যখনই সুযোগ পাবে তখনই গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় আঘাত করবে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায় তারা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এসে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলো শেখ হাসিনার সরকারের জনপ্রিয়তার বিপক্ষে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে।

এইউএ/এমএআর/