প্রথম ডোজের টিকা পেলেও সিরামের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে সংশয়ে আছেন অনেকে

করোনাভাইরাসের টিকার ঘাটতির খবরে মানুষের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত থেকে পাওয়া টিকার মজুত ফুরিয়ে আসার পাশাপাশি আমদানি ও সংগ্রহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মো. আবু নাঈম। টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন মার্চ মাসে। এসএমএস না আসায় এখনও দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি। এর মধ্যেই টিকার মজুত শেষ হয়ে আসার খবরে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে শঙ্কা তার মনে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়াদের তালিকায় কি আমিও পড়েছি?

আবু নাঈমের মতো আরও অনেকে আছেন যারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের বড় একটি অংশ প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন মার্চের শেষ ভাগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাননি দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, দেশে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার। তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকার মজুত হাতে নেই। ঘাটতি প্রায় ১৫ লাখ ডোজের। এখন সেই ঘাটতি পূরণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথাও থেকে নিশ্চয়তা মিলছে না।

কথা রাখেনি সিরাম। তাদের কাছ থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে

গত ২৫ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ টিকা দেশে পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারিতে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০ লাখ। মার্চে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ ভারত সরকারের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে সেটা নিয়েও কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের রফতানি স্থগিতাদেশের কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োগ শেষ করে দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম সম্পন্ন করার মতো পর্যাপ্ত টিকা আমাদের হাতে মজুত নেই।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তাদের বর্তমান অবস্থার কারণে আমাদের টিকা দিতে পারছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে বলা হয়েছে যে, অন্তত ২০ লাখ টিকা অতি দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। টিকা আমদানিতে মূলত সেরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আপাতত দেশটির বাইরে টিকা রফতানিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আমাদের হাতে এখনও যে টিকা রয়েছে, সেগুলো দিতে দিতে আশা করি টিকা চলে আসবে। এটা নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার পর ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় থাকে। এরপর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার নিয়ম। আমাদের দেশে প্রথম ডোজ শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। মাত্র দেড় মাসের মতো সময় অতিবাহিত হয়েছে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ এপ্রিল মাসে শুরু করতে না পারলে মে মাসে শুরু করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। আর প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারলেও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। হয়তো পুরোপুরি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না, তবে কোনো ক্ষতি হবে না।

দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে

করোনাভাইরাসের চলমান টিকা কর্মসূচিতে ঘাটতিতে থাকা দ্বিতীয় ডোজের টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে আট সপ্তাহের পরিবর্তে ১২ সপ্তাহের মধ্যেও টিকা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, সংকটের কারণে আমরা প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। টিকা (ফাইজারের) আসার পর ফের কার্যক্রম শুরু হবে।

ফ্লোরা বলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে ফাইজার থেকে এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা আসবে। সেই টিকা দিয়ে আমার প্রথম ডোজ শুরু করব। অর্ধেক টিকা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য রেখে দেব। এভাবেই চলবে আমাদের টিকা কার্যক্রম।

টিকা নিতে এসে না পেয়ে কেন্দ্র থেকে ঘুরে গেছেন— এমনটা ঘটেনি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকা নিতে এসে কেন্দ্র থেকে কেউ ঘুরে যাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে যে টিকা আছে, তা দিয়ে আমরা এখনও ১০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পারব।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

‘সুতরাং, কেন্দ্র থেকে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত, আমাদের দিক থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে, যাদের প্রথম ডোজ সিরামের টিকা দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাদের একই টিকা দেওয়ার। যদিও কবে টিকা পাব, এমন তারিখ দিতে পারেনি সিরাম। তবে, দ্বিতীয় ডোজ আমরা সিরামের টিকা দিয়েই নিশ্চিত করব। আমাদের হাতে এখনও এক মাস সময় আছে। আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা পাঠানো হচ্ছে। এই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা সিরামের টিকার কার্যক্রম চালাতে পারব।

কয়েকটি জেলায় টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কোনো জায়গায় টিকা দেওয়া বন্ধ নেই। শুক্রবার (৭ মে) হয়তো বন্ধ ছিল।

চীনের লাখ টিকা ঢাকায়

চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া করোনাভাইরাসের পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মার টিকা বাংলা‌দে‌শের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (১২ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মো‌মেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মা‌লেকের কাছে টিকাগু‌লো হস্তান্তর করা হয়। চীনের পক্ষে এগুলো হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জি‌মিং।

চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মার টিকা পৌঁছেছে দেশে

বুধবার (১২ মে) ভোর ৫টা ৩১ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০ জে পরিবহন বিমানের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় চীনের বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় এবং নির্ধারিত সময়ে দেশে অবতরণ করে।

টিআই/এমএইচএস/এমএআর