জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত

বিশ্বে আনুমানিক ৪৬৬ মিলিয়ন মানুষ শ্রবণশক্তি হ্রাসজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন। মোট সংখ্যার বড় অংশই শিশু বা কর্মক্ষম ব্যক্তি। শ্রবণশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা শব্দদূষণকে দায়ী করছেন।

বুধবার (৩ মার্চ) সকালে বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। এসময় তিনি শিশুদের বধির হওয়ার নানা কারণ তুলে ধরেন।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল বলেন, শ্রবণহীনতার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো, খাদ্যজনিত অপুষ্টি, গর্ভবতী মায়ের অপ্রয়োজনীয় ও অসঙ্গত ওষুধ খাওয়া, এনআইসিইওতে শিশুর জীবন রক্ষায় শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো ও মাত্রাতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োগ, লাউডস্পিকার ও সাউন্ড বক্সে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ।

বক্তব্য বিশ্লেষণে শিশুদের শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার যেসব প্রধান কারণ ওঠে এসেছে, সেগুলো হচ্ছে-

১. কম ওজন নিয়ে জন্ম, বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া, নবজাতকের জন্ডিসসহ নানা রোগ।

২.  মায়ের গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমন— সাইটোমেগালো ভাইরাস, রুবেলা। শিশুর মেনিনজাইটিস, মাম্পস, মিজেলাস, মধ্যকর্ণের সংক্রমণ ইত্যাদি।

৩. ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস সংক্রমণ।

৪. দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দপূর্ণ পরিবেশে থাকা বা কানের জন্য ক্ষতিকর ভলিউমে শব্দ শোনা।

৫. কানে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ময়লা জমে কান বন্ধ হয়ে যাওয়া।

এছাড়াও কানে আঘাত, বংশগত কারণ, কানের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ, দীর্ঘ ফোনালাপ, ব্রেন টিউমার, হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত শব্দ (যেমন: আতশবাজি) ও বার্ধক্যজনিত সমস্যা শ্রবণশক্তি হারানোর কারণ।

প্রখ্যাত এ চিকিৎসক বলেন, ষাটোর্ধ ৩৫ শতাংশ মানুষ শ্রবণ শক্তিহীনতায় ভুগছেন। দেশের প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বধিরতায় ভুগছেন। তবে দেশে এ বধিরতার মাত্রা সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। শব্দজনিত বধিরতা কমানো ও এর প্রতিরোধে শহরের শব্দদূষণ কমানো ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, কর্ণ ও শ্রবণ সেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পাশাপাশি নবজাতক শিশুর বধিরতা আছে কি না তার পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করাও জরুরি।

বিএসএমএমইউয়ের সাবেক এ ভিসি বলেন, শ্রবণশক্তি হচ্ছে যেকোনো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডকে সচল রাখার চাবিকাঠি। শ্রবণেন্দ্রিয়ই আমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। একটি শিশুর ভাষাজ্ঞানের উন্নয়ন পুরোটাই নির্ভর করে তার শ্রবণশক্তির ওপর। শিশু ঠিক যেমনটা শুনে অভ্যস্ত তার ভাষাজ্ঞানের মানোন্নয়নও সেরকমই হয় এবং এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ভ্রূণের জরায়ুতে অবস্থান থেকেই।       

শ্রবণশক্তিহীনদের তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, হিয়ারিং লস বা শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে এমন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভইয়েরই আমাদের সমাজে বিভিন্ন কলঙ্কজনিত অপবাদসহ তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় এবং তাদেরকে আলাদা করে দেখা হয়। হিয়ারিং লসের চিকিৎসা না করালে আন্তঃসম্পর্কীয় এবং পারিবারিক বন্ধনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। শ্রবণশক্তি অপর্যাপ্ত হলে শিশুরা ঠিকভাবে কথা বলতে শিখতে পারে না। ফলে তাদের সামাজিক অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়। 

জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু হানিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অডিওলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মানস রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ।

টিআই/আরএইচ