রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের পরিকল্পনা ইইউর
রাশিয়ার কারাবন্দি বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ক কূটনৈতিক প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ এর পররাষ্ট্র বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেফ বরেল সাম্প্রতিক এক টুইটবার্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর নেতাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইইউ এর পররাষ্ট্র বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ডিডব্লিউকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিগত বছরগুলিতে বার বার বিড়ম্বনায় পড়ছে। এক দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বেশ কিছু আচরণ বরদাস্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে পূর্ব প্রান্তে এমন বিশাল ও শক্তিশালী প্রতিবেশীকে উপেক্ষা করাও কঠিন৷ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থও এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়ার সরকার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির বিষক্রিয়া ও গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে রাশিয়া-ইউরোপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।রাশিয়ার উপর আরো শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য চাপ বাড়ছে। অন্যদিকে সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর পথও পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন না কিছু ইইউ নেতা।
এমনই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেফ বরেল মস্কো সফর করে রাশিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা চালিয়েছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নেরর প্রভাবশালী দুই দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সের আগ্রহের প্রেক্ষিতেই তিনি এই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সংলাপ শেষে ব্রাসেলসে ফিরে রোববার বরেল বলেন, রাশিয়া ইইউ-র সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালাতে প্রস্তুত নয়। এক ব্লগ পোস্টে তিনি নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেন৷ তার দুই দিনের মস্কো সফরের সময় রাশিয়া থেকে যেভাবে তিন জন পোল্যান্ড, জার্মানি ও সুইডেন- তিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার, তাতেই রাশিয়ার মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বরেল।
তার মতে, রাশিয়া ইউরোপ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবার পথ বেছে নিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ইউরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি।
আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি ইইউ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন বরেল৷ তারপর মার্চ মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। বরেলের এমন মূল্যায়ন উদারপন্থিদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে; বিশেষ করে সম্প্রতি রাশিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশটির ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করার ঘটনার প্রেক্ষিতে। বিরোধিদলীয় সমর্থকদের ওপর দমন-পীড়ণের অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ বাড়ছে ইউরোপে ৷ ইইউ পার্লামেন্টও এমন ডাক দিচ্ছে।
রাশিয়া ও ইইউ-র মধ্যে বেড়ে চলা উত্তেজনার জের ধরে সমুদ্রের নীচে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধছে৷ মার্কিন প্রশাসন ‘নর্ড স্ট্রিম ২' প্রকল্পের উপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। প্রকল্পের কাজ বন্ধ করার জন্য ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে। শনিবারই অবশ্য প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হয়েছে।
শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল এই প্রকল্পের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তার সরকার নাভালনিকে কেন্দ্র করে মস্কোর সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার সঙ্গে এই বিষয়টিকে জড়াতে চায় না৷ জার্মানির সবুজ দল অবশ্য খোলাখুলি এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। অর্থাৎ চলতি বছরের সাধারণ নির্বাচনের পর এই দল আগামী জোট সরকারের শরিক হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: ডিডব্লিউ
এসএমডব্লিউ