যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন/ ছবি: সংগৃহীত

ট্রাম্পের আমলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশ্ব জুড়েই প্রশ্ন ছিল, তিনি কী ওয়াশিংটনের বেইজিং নীতিতে পরিবর্তন আনবেন? দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বাইডেন। এবার কথা বললেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। বাইডেনই জানিয়েছেন, দুই ঘণ্টা ধরে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘(চীনা প্রেসিডেন্টর সঙ্গে) ভালো আলোচনা হয়েছে। আমি যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন থেকেই শি জিনপিং সম্পর্কে জানি।’ রেল ও অন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চীনের উদ্যোগ ও বিনিয়োগ নিয়ে বাইডেন বলেন, (অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়াতে) আমরা যদি উদ্যোগী না হই, তাহলে চীন আমাদের লাঞ্চ খেয়ে ফেলবে।’

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) একদল সিনেটরের সামনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন। সেখানে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেন বাইডেন।

এখনও পর্যন্ত বিশ্বের যতজন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন বাইডেন, তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা আলাপ। বাইডেন সেখানে আর্থিক ও সামরিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়তে পারে তার উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে পরিবেশ ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জিনপিংয়ের সঙ্গে। এছাড়া প্রযুক্তি, বাণিজ্য অসাম্য, মানবাধিকারের প্রসঙ্গও আলোচনায় এসেছে। অন্যদিকে একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াই উভয় দেশের জন্যই বিপর্যয়কর হবে বলে বাইডেনকে সতর্ক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, যদি আমরা জোর গতিতে সামনে না এগোই, তারা (চীন) আমাদের ছাড়িয়ে যাবে। পরিবহন, পরিবেশসহ অন্যান্য ইস্যুতে চীনারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। আমাদেরও গতি বাড়াতে হবে।

এদিকে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘বাইডেন  মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা, সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বলেছেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ ও মুক্ত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি তাইওয়ান, জিনজিয়াং প্রদেশ ও হংকংয়ে চীনের নীতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’

বাইডেন-জিনপিংয়ের কথার পরই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে চীনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পরিবর্তন করছেন বাইডেন? কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে চীনের প্রতি কড়া মনোভাব নিলেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতির পরিবর্তন করতে পারেন বাইডেন। ট্রাম্প যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা লঘু করা হতে পারে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে’কে এক উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চীনের প্রতি কী ধরনের নীতি নেওয়া উচিত সেই ধারণা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আছে। তিনি সেভাবেই এগিয়ে যেতে চান। (বেইজিংয়ের সঙ্গে) যোগাযোগের পথ সবসময় তিনি খুলে রাখতে চান।’

এর আগে গত বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে চীনবিষয়ক টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইসঙ্গে চীন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অবস্থান খতিয়ে দেখতে মার্কিন সামরিক বাহিনী কাজ করছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

সেসময় প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, (চীনের বিরুদ্ধে) কৌশল নির্ধারণ, কার্যকর নীতি প্রণয়ন, প্রযুক্তি, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তসহ আরও অনেক বিষয়ে এই টাস্কফোর্স কাজ করবে। তার মতে, চীনের পক্ষ থেকে আসা ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বৈশ্বিকভাবে ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি-স্থিতিশীলতা, মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করতে হবে আমাদের।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সূত্র দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, ১৫ জন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে পেন্টাগনে চীনবিষয়ক এই টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এর প্রধান হিসেবে কাজ করবেন বাইডেনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এলি র‌্যাটনার।

সূত্র: রয়টার্স, ডয়চে ভেলে

টিএম