যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ইয়েমেনে জরুরি মানবিক ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি না করা হলে চলতি বছরে দেশটিতে অনাহারে ৫ বছরের কমবয়সী কমপক্ষে ৪ লাখ শিশু মারা যেতে পারে। শুক্রবার জাতিসংঘের অন্তত চারটি সংস্থা ইয়েমেনে অনাহারে-অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের ব্যাপারে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুর ছয় বছর পর জাতিসংঘের চার সংস্থার এই সতর্কবার্তা এল; বর্তমানে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই মানবিক ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এসব সংস্থা ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরে ইয়েমেনে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের তীব্র পুষ্টিহীনতার পরিমাণ ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, তীব্র পুষ্টিহীনতার মানে সেখানে খাবারের অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। দেশটির এডেন, হোদেইদাহ, তাইজ এবং সানা অঞ্চলের শিশুরা সবচেয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন।

জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, এই সংখ্যা ইয়েমেনের শিশুদের সাহায্যের আরেকটি আর্তনাদ; যেখানে একজন পুষ্টিহীন শিশু মানেও একটি পরিবারের বাঁচার লড়াই।

তারা বলেছে, চলতি বছরে ইয়েমেনে আরও ২৩ লাখের বেশি শিশু; যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে, তারা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সংঘাতের প্রত্যেক বছরে ইয়েমেনে অল্পবয়সী শিশু এবং মায়েদের তীব্র পুষ্টিহীনতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে দেশটিতে আরও প্রায় ১২ লাখ গর্ভবতী অথবা স্তন্যদানকারী নারী তীব্র পুষ্টিহীনতায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইয়েমেনে লাখ লাখ মানুষ অনাহার এবং অর্ধাহারে দিনাতিপাত করলেও দেশটিতে এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়নি। তবে জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বে ভয়াবহ মানবিক সংকটে রয়েছে ইয়েমেন।

গত বছর সংঘাতের পাশাপাশি অর্থনীতিতে ধস এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দাতাদের সহায়তা কমে যাওয়ায় ইয়েমেনে মানবিক সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। পুষ্টির জোগান এবং অন্যান্য যেসব সেবা দেশটির লাখ লাখ মানুষকে অনাহার এবং অসুস্থতা থেকে রক্ষায় এতদিন চালু ছিল; তহবিলের তীব্র সংকটের কারণে সেগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের ওই চার সংস্থা বলেছে, দেশটিতে গত বছর মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ১৯০ কোটি পেয়েছে তারা। চলমান মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং এর পরিসর আরও বাড়ছে।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল-হাদি দেশটির হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হাদিকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে হুথিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে। হুথিরা বলছে, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস