করোনা ভ্যাকসিনে বন্ধ্যাত্বের কোনও প্রমাণ নেই
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব
করোনাভাইরাসের টিকা নারীদের সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে তোলে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব দাবি করা হচ্ছে; বিশেষজ্ঞরা সেসবের কোনও প্রমাণ পাননি বলে জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল কিছু পোস্টে বলা হচ্ছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা ভ্যাকসিন নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ অথবা গর্ভবতী নারীদের প্ল্যাসেন্টায় আক্রমণ করতে পারে। কিংস কলেজ লন্ডনের প্রসূতিবিভাগের অধ্যাপক ও রয়্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ লুসি চ্যাপেল বলেন, ভ্যাকসিন নারীদের সন্তান জন্মদানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনও জৈবিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?
করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করার বার্তা পাঠিয়ে শরীরে কাজ করে ভ্যাকসিন। প্রথমে শরীরে করোনাভাইরাসের স্বতন্ত্র একটি স্পাইকের ক্ষুদ্র এবং হালকা ক্ষতিকারক অংশ তৈরি করে। এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে উঠে এবং এর ফলে অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকনিকা তৈরি হয়; যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এছাড়া শরীরে এই ভাইরাস ঢুকে পড়লে সেটিকে শনাক্ত করে সেটিকে প্রতিরোধে আবারও লড়াই শুরু করে দেয়।
বিজ্ঞাপন
নারীদের প্রজনন ক্ষমতার ওপর করোনার ভ্যাকসিনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কোনও সুযোগ নেই।
করোনা ভ্যাকসিন শরীরে সংক্রামক ভাইরাস দিতে পারে না। কারণ এসব বার্তাবাহী কণা অত্যন্ত স্বল্প সময় বেঁচে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে করোনা শনাক্তের বার্তা দেওয়ার পরপরই নিজে থেকেই ধ্বংস হয়ে যায়। যে কারণে ফাইজারের ভ্যাকসিন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করতে হয়– জেনেটিক উপাদানগুলো পৃথক হয়ে গেলে ভ্যাকসিনটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে।
ইউনিভার্সিটি অব লিডসের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নিকোলা স্টোনহাউস বলেন, এই ভ্যাকসিন প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন ভাবনার অবকাশ নেই।
প্রমাণ কি বলে?
যুক্তরাজ্যের সরকার কিছুদিন আগে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে একটি দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছিল। সেখানে প্রজনন ক্ষমতার ওপর ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রভাব ফেলে কিনা সেটি এখনও অজানা লেখা একটি লাইনও ছিল। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই লাইনটি উল্লেখ করে গুজবের বিস্তার ঘটান।
যুক্তরাজ্যের সরকারের নির্দেশনায় বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা হয়, প্রাণীর দেহে ফাইজারের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করে প্রজনন ক্ষমতার ওপর কোনও ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞানীরা বিষয়গুলো যেভাবে তুলে ধরেন সেগুলোর বেশিরভাগ নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এখানেও সেই বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। যখন বিজ্ঞানীরা বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মেলেনি। তখন এর অর্থ দাঁড়ায়- এই ভ্যাকসিন নিয়ে এখন পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরীক্ষা হয়নি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কাছে এবিষয়ে কোনও তথ্য নেই অথবা আমরা অন্ধকারে গুলি ছুড়ছি।
অধ্যাপক চ্যাপেল বলছেন, অন্যান্য নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি আরও অনেক ভ্যাকসিনের প্রমাণ আছে; যেগুলো প্রজনন ক্ষমতার ওপর কোনও ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এ ধরনের একটি হলো ফ্লুর ভ্যাকসিন। এগুলো পুরোপুরি নিরাপদ এবং গর্ভকালীন সময়েও ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বরং সেটি প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। যে কারণে ভ্যাকসিন পরবর্তী পরিস্থিতির কথা না ভেবে, করোনা আক্রান্ত হলে প্রজনন সমস্যা হতে পারে কিনা তা নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত।
প্ল্যাসেন্টা নিয়ে মিথ্যা দাবি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু গুজব ছড়িয়েছে যে, ভ্যাকসিন প্রজনন ক্ষমতাকে হুমকিতে ফেলতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, প্ল্যাসেন্টা তৈরির উপাদান এই ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিন নেওয়া হলে তা শরীরকে প্ল্যাসেন্টা আক্রমণের দিকে পরিচালিত করতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দাবির কোনোটিই সঠিক নয়। তবে প্ল্যাসেন্টার বিকাশে ব্যবহৃত একটি প্রোটিনের সঙ্গে ভ্যাকসিনের প্রোটিনের হালকা মিল আছে। কিন্তু তা প্ল্যাসেন্টাকে বিভ্রান্ত করার মতো পর্যাপ্ত নয় এবং এর মাধ্যমে প্ল্যাসেন্টার কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অধ্যাপক চ্যাপেল বলেন, নারীদের প্রজনন এবং ফাইজারের করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপারে তিনি উদ্বিগ্ন নন। বিবিসির দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইংল্যান্ডের উপ-প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা জোনাথন ভ্যান-ট্যান বলেন, প্রজনন প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনও ভ্যাকসিনের কথা আমি কখনই শুনিনি।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস