সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান দলনেতা ও প্রবীণ রাজনীতিক মিচ ম্যাককনেলের তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সমর্থকদের চালানো হামলায় ট্রাম্প ‘নৈতিকভাবে’ জড়িত উল্লেখ করার পর ম্যাককনেলকে ব্যক্তিগতভাবে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর দেওয়া সবচেয়ে বড় বিবৃতিতে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মিচ ম্যাককনেল একজন জঘন্য, একগুঁয়ে ও ভাড়াটে রাজনীতিক। রিপাবলিকানরা যদি তার সাথে থাকেন, তাহলে তারা আর কখনও (নির্বাচনে) জয় পাবেন না।’

প্রবীণ রিপাবলিকান সিনেটর ম্যাককনেল বহু বছর ধরে সিনেটে তার দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন

প্রবীণ রিপাবলিকান সিনেটর ম্যাককনেল বহু বছর ধরে সিনেটে তার দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানিতে ক্যাপিটলে হামলায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ থেকে ট্রাম্পের খালাসের পক্ষে ভোট দেন তিনি। তবে অভিশংসন থেকে ট্রাম্প রেহাই পাওয়ার পর ক্যাপিটল ভবনে হামলায় ট্রাম্প ‘নৈতিকভাবে জড়িত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গত শনিবার সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন সংক্রান্ত ভোট শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ম্যাককনেল বলেন, ‘ক্যাপিটলে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা তার (ডোনাল্ড ট্রাম্প) ব্যানার নিয়ে এসেছিল, হামলার পর ক্যাপিটলে তার পতাকা টাঙ্গিয়েছিল এবং বারবার চিৎকার করে তারা ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেছিল।’

গত ৬ জানুয়ারি ক্যপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব

কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করতে হলে ১০০ সদস্যের সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করতে হলে ৬৭ জন সিনেটরকে ভোট দিতে হতো। কিন্তু অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন ৫৭ জন। আর বিপক্ষে ৪৩ জন। ১০ ভোট কম পাওয়ায় অভিশংসনের হাত থেকে সিনেটে দ্বিতীয়বারের মতো রক্ষা পেলেন ট্রাম্প। তবে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৭ জন রিপাবলিকান সদস্য।

এদিকে সিনেটে খালাস পাওয়ার পর মুখ খুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিশংসনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই দেওয়া এক বিবৃতিতে সিনেটের এই অভিশংসন শুনানির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তিনি তার অভিশংসন বিচারকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাইনি খোঁজার মিশন’ বলে অভিহিত করেন।

অভিশংসনের বিপক্ষে ভোট দিলেও গত শনিবার ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন মিচ ম্যাককনেল

তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্য খারিজ করে ক্যাপিটলে হামলার জন্য সরাসরি তাকেই দায়ী করেছিলেন সিনেটর মিচ ম্যাককনেল। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই… একেবারেই কোনো সন্দেহ নেই যে, ক্যাপিটল হিলে ন্যাক্কারজনক ওই হামলার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাস্তবিক এবং আদর্শিক- দু’দিক থেকেই দায়ী।’

মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতির মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত ম্যাককনেলের শনিবারের বক্তব্যের জবাব দেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তাকে আক্রমণ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘সিনেটর মিচ ম্যাককনেলের মতো নেতাদের হাত ধরে চললে রিপাবলিকান পার্টি আর কখনোই সম্মান পাবে না বা শক্তিশালীও হতে পারবে না।’

ট্রাম্প দাবি করেন, ম্যাককনেলের রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের অভাবের কারণেই গত নভেম্বরের নির্বাচনের পর সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি রিপাবলিকানরা।

এর আগে সিনেটে অভিশংসনের হাত থেকে রেহাই পান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার সিনেটে ভোটাভুটিতে ৫৭-৪৩ ভোটে খালাস পান তিনি। জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালীন ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা

আর এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাসও গড়েছিলেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ হলো, নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে ট্রাম্প একের পর এক প্রমাণহীন অভিযোগ দিতে থাকেন। কিন্তু তার ওই অভিযোগ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। তারপর কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের সময় ক্যাপিটল ভবনে যেতে সমর্থকদের উস্কানি দিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির কথা শুনে সমর্থকরা আগে থেকেই উত্তেজিত ছিলেন। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল হামলার উস্কানি। এ কারণেই ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে ট্রাম্প সমর্থকরা। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ভাগ্য এতোদিন ঝুলে ছিল সিনেটের হাতে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিনেটে অভিশংসিত হলেও হয়তো ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসতো না। তবে অভিশংসিত হলে প্রার্থী হতে পারতেন না ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজয়ের পরই ট্রাম্প অবশ্য ২০২৪ সালের জন্য নিজের প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে রেখেছেন। আর লাইমলাইটে থাকতেই কিনা এবার মিচ ম্যাককনেলের মতো প্রবীণ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিককেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না তিনি।

সূত্র: বিবিসি

টিএম