বন্দী অবস্থার আগে তোলা রাজকুমারী শেখ লতিফার ছবি

দেশ ছেড়ে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করার পর জোরপূর্বক ঘরবন্দী করে রাখার অভিযোগ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএনই) এক রাজকন্যা। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক ভিডিও ফুটেজে তিনি এ দাবি করেন। একইসঙ্গে ঘরবন্দী অবস্থায় ওই রাজকন্যা নিজের প্রাণনাশেরও আশঙ্কা করছেন বলে ভিডিও ফুটেজে দাবি করেছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আলোচিত ওই রাজকন্যার নাম শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ আল-মাখতুম। তার বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুম। তিনি দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শেখ লতিফা সমুদ্রপথে আরব আমিরাত থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর থেকেই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়

বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে দেওয়া ওই ফুটেজে রাজকুমারী লতিফা আল-মাখতুম বলেন, তিনি নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার পর কমান্ডোরা তাকে মাদকাচ্ছন্ন করে এবং আবার তাকে বন্দীশালায় নিয়ে আসে। গোপনে পাঠানো বার্তাগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার বন্ধুরা জাতিসংঘকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অবশ্য দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এর আগে জানিয়েছিল যে, রাজকুমারী শেখ লতিফা তার নিজের পরিবারের তত্ত্বাবধানে নিরাপদেই রয়েছেন।

জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার কমিশনার ও আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন ২০১৮ সালে রাজকুমারীর সাথে দেখা করেছিলেন। এরপর তাকে একজন ‘বিপদগ্রস্থ তরুণী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। নতুন এই ভিডিও সামনে আসার পর বিবিসিকে মেরি রবিনসন জানিয়েছেন, নিজের পরিবারের কাছে ‘ভয়াবহভাবে ধোঁকার শিকার হয়েছিলেন’ ওই রাজকুমারী।

শেখ লতিফার বর্তমান অবস্থা এবং তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লতিফার বিষয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। সবকিছু বদলে গেছে। আর তাই আমার মনে হয়ে এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

রাজকুমারী লতিফার বাবা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুম বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন। এছাড়া তিনি দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। লতিফাকে আটক করার পর দুবাইয়ে ফেরত নেওয়ার বছর খানেক পর তাকে গোপনে দেওয়া একটি ফোনে কয়েক মাস ধরে ওই ভিডিওগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি বাখরুমে বসে সেগুলো রেকর্ড করেছিলেন। কারণ একমাত্র বাথরুমের দরজাই তিনি বন্ধ করতে পারতেন।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে সমুদ্র পথে আরব আমিরাত থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন শেখ লতিফা

ভিডিও বার্তায় যা বলেছেন তিনি:

নৌকা থেকে সেনাদের হাতে আটক হওয়ার সময় নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন লতিফা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সেনা সদস্যদের ‘লাথি মেরেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে মারামারিও করেছিলেন তিনি। এমনকি নিজেকে মুক্ত করতে আমিরাতের এক কমান্ডোর হাতে কামড়ে ধরেছিলেন তিনি। পরে তাকে অচেতন করার ওষুধ দেওয়া হয়। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং তাকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে তোলা হয়।

সেটি দুবাইয়ে অবতরণের আগপর্যন্ত অচেতন অবস্থায়ই ছিলেন তিনি। তিনি পুলিশের পাহারায় একটি বাড়িতে আটক ছিলেন। সেই বাড়ির জানালাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা বা আইনি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

লতিফাকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে সেটি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেছে প্যানোরামা।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি বাংলা

টিএম