করোনার উদ্বৃত্ত টিকা দরিদ্র দেশগুলোকে দেবে যুক্তরাজ্য
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জি-৭ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
যুক্তরাজ্যের হাতে থাকা করোনাভাইরাসের উদ্বৃত্ত টিকা দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জি-৭ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এই অঙ্গীকার করেন।
এসময় ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিভিন্ন রোগের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন টিকা উদ্ভাবন করতে ১০০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এবারের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ৪০ কোটি ডোজের বেশি করোনা টিকা অর্ডার করেছে। অর্থ্যাৎ দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিককে টিকা দেওয়ার পরও অনেক ডোজ টিকা উদ্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু এরপরও দরিদ্রদের জন্য ব্রিটেন যথেষ্ট কিছু করছে না বলে দেশটির সমালোচনা করেছেন অনেকে। উদ্বৃত্ত এসব টিকার ঠিক কি পরিমাণ এবং কতোটা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে; সে বিষয়ে চলতি বছরের শেষের দিকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সম্মেলনে বরিস জনসন বলেন, ‘অবশেষে করোনাকে হার মানিয়ে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে নিয়েছে বিজ্ঞান। সারা বিশ্বের সবাই তাদের চাহিদা মতো টিকা হাতে পাচ্ছে; এটা আমাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর তাহলেই করোনা মহামারিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে পারবে সারা বিশ্ব।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের দেশের মানুষকেই এই টিকা দিতে চাই না। সারা বিশ্বের মানুষ টিকা পাবে, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। কারণ এটা বৈশ্বিক মহামারি। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’
এর আগে ব্রিটেন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশটির হাতে থাকা করোনার উদ্বৃত্ত টিকা কতোখানি এবং কীভাবে দরিদ্র দেশগুলোতে বিতরণ করা হবে সে ব্যাপারে এ বছরের শেষ নাগাদ একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে। দেশটিতে আসন্ন শরতকালে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) বুস্টার ডোজ নিতে হবে কিনা, সেই সঙ্গে সরবরাহ চেইনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ব্রিটেনের মন্ত্রিপরিষদ।
ব্রিটেন সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উদ্বৃত্ত করোনা টিকার অর্ধেকের বেশি কোভ্যাক্স প্রকল্পে দেওয়া হবে। সারা বিশ্বে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে মূলত কোভ্যাক্স প্রকল্প হাতে নিয়েছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি। গত বছরের ডিসেম্বরে এই উদ্যোগে ব্রিটেন ৫৪ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র ৪০০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ধনী দেশগুলোর উচিত তাদের হাতে থাকা করোনা টিকার ৪-৫ শতাংশ দরিদ্র দেশগুলোকে দিয়ে দেওয়া।
এদিকে জি-৭ এর সম্মেলনে করোনা মহামারি, মহামারির কারণে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি এবং চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে আলোচনা করবেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম জি-৭ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্মেলনে মহামারি এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন—টিকা উৎপাদন, বণ্টন ও সরবরাহ, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং চীনের পক্ষ থেকে আসা সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন প্রেসিডেন্ট।’
জি-৭ সম্মেলনের অন্যরকম তাৎপর্য রয়েছে ব্রিটেনের জন্যও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের দিকে মনযোগ দেওয়া যুক্তরাজ্যের জন্যও এই সম্মেলন নতুন কিছু সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি
টিএম