তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে সুর নরম করে কথা বলতে শুরু করেছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ স্বার্থ নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্যকে ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, আমরা মনে করি, আঙ্কারা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যমান মতপার্থক্যগুলোর তুলনায় উভয় দেশের যৌথ স্বার্থ অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আঙ্কারা আগ্রহী বলেও এসময় জানান তিনি।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘উভয় দেশের মধ্যে মধ্যে থাকা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নিয়ম অনুযায়ী তুরস্ক তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।’ তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক ও আমেরিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ‘মারাত্মকভাবে পরীক্ষা’ করা হয়েছে।

ন্যাটো জোটভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করেছে তুরস্ক। তবে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে। চলতি মাসের শুরুতে রুশ এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে আঙ্কারাকে নিজেদের মনোভাব জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় রাশিয়ার তৈরি এই সমরাস্ত্র ব্যবহার না করার আহ্বান জানায় দেশটি।

অত্যাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ন্যাটো প্রযুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বলছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি গত ৬ ফেব্রুয়ারি বলেন, ‘(ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায়ের পর) আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আসেনি এবং আমরা আবারও তুরস্ককে এস-৪০০ ব্যবহার না করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

কিরবি আরও বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছে তুরস্ক। কিন্তু ন্যাটো সদস্য এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ হিসেবে আঙ্কারার যে অঙ্গীকার রয়েছে তার সঙ্গে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত অসঙ্গতিপূর্ণ।’

রুশ নির্মিত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র

এরপরই বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তুরস্ক। চলতি মাসে প্রথম টেলিফোন কথোপকথনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভ্যানকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন বলেন, এস-৪০০ নিয়ে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংকটের সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

এছাড়া নিজেদের মধ্যে প্রথম টেলিফোন আলাপে রুশ নির্মিত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ মতবিরোধ থাকা অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সাল থেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে তুরস্ককে সতর্ক করে আসছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক রাশিয়ার হাতে বিশাল অঙ্কের বাজেট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ন্যাটা জোটের সামরিক প্রযুক্তিকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এরপরই গত বছরের শেষের দিকে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে তুরস্কের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এর প্রায় এক বছর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস -৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ন্যাটোর নীতি-বিরোধী ও ইউরো-আটলান্টিক জোটের জন্য হুমকিস্বরূপ। অবশেষে বাইডেন প্রশাসনের দৃঢতার কাছে সুর নরম করতে বাধ্য হলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম