মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভ দমনে সেখানকার পুলিশ প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করায় দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

শনিবার এক টুইটবার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন,‘ মিয়ানমারে সম্প্রতি যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটল, আমি তার নিন্দা জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার, ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’

শনিবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুই জন নিহত হয় বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে মান্দালয়ের স্বেচ্ছাসেবী জরুরি সেবা সংস্থা পারাহিতা ডারহির নেতা কো অং বলেছেন, ‘বিক্ষোভে দুই জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।'

শনিবার মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরে অভ্যুত্থান বিরোধীরা রাস্তায় নেমে এসে সামরিক শাসনের অবসান ও নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়। এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভে সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাসহ কবি ও পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দেন।

মান্দালয়ে পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলির মুখে কিছু প্রতিবাদকারী গুলতি ছুড়ে জবাব দেয়। তবে পুলিশ তাজা গুলি ছুড়েছে না রবার বুলেট ব্যবহার করেছে প্রাথমিকভাবে তখন বিক্ষোভকারীদের কাছে তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মান্দালয়ের ভয়েস অব মিয়ানমার সম্প্রচারমাধ্যমের একজন সহকারী সম্পাদক লিন খাংসহ গণমাধ্যম কর্মীরা ও মান্দালয়ের একটি জরুরি সেবা বিভাগ প্রথমে জানিয়েছিল, মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তি মারা গেছেন; কিন্তু পরে সেখানে দুই জন মারা গেছেন বলে একজন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘মাথায় গুলি লেগে একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। বুকে গুলিবিদ্ধ আরেকজনের পরে মারা যান।’

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী নতুন নির্বাচন করে বিজয়ীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা তা বিশ্বাস করতে পারছে না।

৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেইপিদোতে পুলিশ একদল প্রতিবাদকারীকে ছত্রভঙ্গ করার সময় এক তরুণী গুলিবিদ্ধ হন। মাথায় আঘাত পাওয়া ওই তরুণী শুক্রবার মারা যান। মিয়ানমারের এবারের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা এটি। এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গুরুতর আহত এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর কথাও নিশ্চিত করেছে।

মিয়ানমার এর আগেও প্রায় অর্ধশত বছর সেনা শাসনে ছিল। সেসময়কার জান্তা বিরোধী বিক্ষোভগুলোতে নিয়মিত রক্তপাতের ঘটনা ঘটলেও এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রতিবাদকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং আইন অমান্য আন্দোলন ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তাকে বেশ বিপাকেই ফেলেছে।

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ