সোমবার (২১ ডিসেম্বর) উত্তর গোলার্ধে বছরের দীর্ঘতম রাত। এই রাতেই সৌরমণ্ডলের দুই বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি একে অপরের এতটা কাছাকাছি চলে আসবে যে, গত প্রায় ৪০০ বছরে এই গ্রহ-যুগলকে এতটা কাছাকাছি দেখা যায়নি।

কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের সোমবারের এক অনলাইন প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়ে লিখেছে, সতেরো শতকে শেষবার যখন এই দুই গ্রহের যুগলবন্দী দেখা গিয়েছিল তখন গ্যালিলিও বেঁচে ছিলেন। 

বৃহস্পতি ও শনি এতটা কাছাকাছি চলে আসবে যে গ্রহ দুটিকে দেখে ‘যুগ্ম গ্রহ’ বলে বিভ্রম হতে পারে অনেকের।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এ খবর জানিয়ে বলেছিল যে, আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতি ও শনি এতটা কাছাকাছি চলে আসবে যে গ্রহ দুটিকে দেখে ‘যুগ্ম গ্রহ’ বলে বিভ্রম হতে পারে অনেকের।

জোতির্বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, সৌরমণ্ডলের দুই বৃহৎ গ্রহের কথিত এই যুগলবন্দী অতটা বিরলও নয়। কারণ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় প্রতি বিশ বছর অন্তর বৃহস্পতি তার প্রতিবেশী গ্রহ শনির পাশ ঘেঁষে যায়।   

পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকেই যুগলবন্দি দেখা যাবে। তবে নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থিত দেশগুলো থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে তা চোখে পড়বে।

তারা এও বলছেন যে, তবে এবার গ্রহ দুটি খুব কাছাকছি আসবে। আমাদের ধারণা অনুযায়ী এই সময় গ্রহ দুটির দূরত্ব থাকবে এক ডিগ্রির দশ ভাগের এক ভাগ। এদিন সূর্যাস্তের পরপরই তা দেখা যেতে শুরু করবে।   

পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকেই যুগলবন্দি দেখা যাবে। তবে নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থিত দেশগুলো থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে তা চোখে পড়বে। গ্রহ দুটি এতটাই উজ্জ্বল থাকবে যে গোধূলিতেও আকাশে তাদের দেখা মিলবে।

দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে না দেখলে শনি ও বৃহস্পতিকে একটি গ্রহ মনে হবে। আর দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে যখন দেখা হবে তখন বৃহস্পতির চেয়ে আকারে ছোট দেখাবে শনিকে। 

পৃথিবী থেকে দুই গ্রহকে দেখতে অবশ্য একটি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে গ্রহ দুটির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ৭৩০ মিলিয়ন কিলোমিটারের। অপরদিকে পৃথিবী থেকে এ সময় বৃহস্পতির দূরত্ব থাকবে ৮৯০ মিলিয়ন কিলোমিটার। 

ভ্যানডারবিট বিশ্ববিদ্যালয়ের জোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড উইনট্রাব বলছেন, ‘আমি এটা বলতেই পারি যে, কোনও মানুষ তার জীবনে মাত্র একবারই এমন দৃশ্য দেখার সুযোগ পান। ফলে এটাকে বিরলই বলতে হবে।’ 

এবারের যুগলবন্দী অত্যন্ত বিরল। কারণ এই সময় গ্রহ দুটি একে অপরের অনেক কাছে চলে আসবে। এমন এক মহাজাগতিক কাণ্ড দেখার জন্য বহু বছর অপেক্ষা করতে হয় বিজ্ঞানীদের।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা জ্যোতির্বিদ প্যাট্রিক হার্টিগান বলছেন, ‘এই দুই গ্রহের বিন্যাস অত্যন্ত বিরল। প্রতি ২০ বছর অন্তর ব্যবধানের তারতম্য ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এবারের যুগলবন্দী অত্যন্ত বিরল। কারণ এই সময় গ্রহ দুটি একে অপরের অনেক কাছে চলে আসবে। এমন এক মহাজাগতিক কাণ্ড দেখার জন্য বহু বছর অপেক্ষা করতে হয় বিজ্ঞানীদের।’

জোতির্বিদ্যার জনক গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ১৩ বছর পর ১৬২৩ সালে শেষবার এই দুই গ্রহকে এত কাছাকাছি দেখা গিয়েছিল। শনি ও বৃহস্পতি গ্রহের পরবর্তী মহা-সংযোগ হতে পারে ২০৮০ সালের ১৫ মার্চ।

এএস