ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র (রকেট) হামলা চালানো হয়েছে। বাগদাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস লক্ষ্য করে রোববার অন্তত আটটি ‘কাতিউশা’ রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরাকের সেনাবাহিনী এবং দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরাকের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র গুলো গ্রিন জোনের ভেতরে দূতাবাসের আবাসিক কমপ্লেক্স এবং তল্লাশি চৌকিতে আঘাত করেছে। এতে কয়েকটি ভবন ও গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন একজন ইরাকি সেনা।

অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা যেন না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইরাকের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ

হামলার জন্য ‘আইনবিরোধী গোষ্ঠী’কে দায়ী করেছে সেনাবাহিনী।

হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চত্বরের সাইরেনগুলোর শব্দ পুরো গ্রিন জোন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রিন জোনের অভ্যন্তরীণ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অ্যান্টি রকেট সিস্টেমের মাধ্যমে আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটিকে অকার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। পাশাপাশি অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা যেন না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইরাকের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের আনতে আমরা ইরাকের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও

এ প্রসঙ্গে দূতাবাস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন দূতাবাস এই মর্মে নিশ্চিত করছে যে, (বাগদাদের) আন্তর্জাতিক এলাকা লক্ষ্য করে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, দূতাবাসের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। হামলায় দূতাবাস চত্বরের কিছু ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিত আহত বা হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হামলার পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামলায় ইরাকের সেনাবাহিনীর এক সদস্য আহত হয়েছেন। আহত সেই সেনা সদস্যের দ্রুত আরোগ্য লাভের কামনাও করেছেন তিনি।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ এর একজন মুখপাত্র

ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধির পথে এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে পম্পেও বলেন, ‘নিন্দনীয় এই হামলার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং বিদ্যমান ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের আনতে আমরা ইরাকের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। 

পাশাপাশি ইরাকের জনগণের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে তারা যেন ক্ষমতাসীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে সমর্থন করেন।

ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ এর একজন মুখপাত্র এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে এই হামলার জন্য দায়ী করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা। তবে ইরাকের কোনো পরিচিত ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী রোববার দূতাবাসের ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

গত অক্টোবরে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ঘোষণা দিয়েছিল, ইরাক থেকে সৈন্যদল প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র যে সময়সীমা দিয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বা দেশটির সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কিছুর ওপর হামলা থেকে বিরত থাকবে তারা।

মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ইরাকের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

তবে পূর্ব প্রতিশ্রুতি থেকে যে মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সরে এসেছে, সাম্প্রতিক হামলায় তা স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন ইরাকের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ইরাকে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের ৫ হাজার সৈন্যদল প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি রাজধানী ওয়াশিংটন থেকে এই মর্মে ইরাক সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে যে— মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।

এসএমডব্লিউ/এএস