সেনাসমর্থকদের হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এক বিক্ষোভকারী

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের সমর্থকরা দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরটির বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পাথর, গুলতি নিক্ষেপ করেন সেনাবাহিনীর সমর্থকরা। এ সময় তাদের হাতে ছুরিও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ব্যাপক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপি করে এনএলডি আবারও ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ এনে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গাইছে সামরিক বাহিনী। অভ্যুত্থানের পর গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে প্রত্যেকদিনই দেশটিতে প্রতিবাদ-সমাবেশ এবং ধর্মঘট পালন করছেন বিক্ষোভকারীরা।

বৃহস্পতিবার দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা আবারও অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে লাঠি ছুড়ে মারছেন সেনাসমর্থকরা

রয়টার্স বলছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই ইয়াঙ্গুনের প্রাণকেন্দ্রে অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় ১ হাজার সমর্থক সমাবেশ করেছেন। সেনাবাহিনীর সমর্থকদের অনেকেই আলোকচিত্রী, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের হুমকি দিয়েছেন। শহরটিতে শিগগিরই আরও মারাত্মক সহিংসতা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ এই বার্তাসংস্থা বলছে, সেনাবাহিনীর অনেক সমর্থকের হাতে ছুরি এবং গুলতি দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সেনাসমর্থকরা পাথর এবং গুলতি থেকে ইট ছুড়েছেন।

ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানবিরোধী কয়েকজনকে মারধর করেছেন সেনাবাহিনীর সমর্থকরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সমর্থক; যাদের একজনের হাতে ছুরি দেখা যায়, তারা ইয়াঙ্গুনের একটি হোটেলের বাইরে এক বিক্ষোভকারীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার পর রাস্তার ওপর পড়ে থাকা ওই ব্যক্তিকে জরুরি সেবাকর্মীরা উদ্ধার করেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে কোনও তথ্য জানা যায়নি।

অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করে আসা ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা থিন জার শুন লেই ই রয়টার্সকে বলেছেন, আজকের এসব ঘটনায় দেখা গেছে, কারা সন্ত্রাসী। জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে তারা ভীত। কিন্তু আমরা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো।

মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে সেনাবাহিনীর সমর্থকদের বিক্ষোভ 

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে দেয়। বৃহস্পতিবারের এই বিক্ষোভে নিজেদের পোশাক পরে ‘হোয়াইট কোট আন্দোলন’র অংশ হিসেবে ইয়াঙ্গুন বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের।

অসহযোগ আন্দোলন এবং বিক্ষোভে মিয়ানমারে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নাগরিকদের এই আন্দোলনে সহিংসতা দেখা দিলে তা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

নিজেদের প্লাটফর্ম থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। এর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে টানা বিক্ষোভের মধ্যেই অনলাইন মাধ্যমেও একটা ধাক্কা খেল দেশটির জান্তা সরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জগতের জায়ান্ট এই কোম্পানি বলছে, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো বড় প্লাটফর্মে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির ঝুঁকি অনেক বেশি এবং সেটা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর বিভিন্ন ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে নিজেদের প্লাটফর্মে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ফেসবুক। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে।

এসএস