তীব্র শীতের কারণে ইতোমধ্যে ৪০ জন মারা গেছেন। তারপরও মোদি সরকারের কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে অনড় দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত ভারতের লাখ লাখ কৃষক। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিক্ষোভরত এই কৃষকরা জানিয়েছেন, আন্দোলন সফল না করে ঘরে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

নভেম্বরের শেষভাগ— যে সময় ট্রাক এবং ট্রাক্টরে করে কয়েক হাজার কৃষক নয়াদিল্লিতে এসে উপস্থিত হন এবং রাজধানীর সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে প্রতিবাদী অবস্থান নেন

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর— পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ এবং মরু রাজ্য রাজস্থান— লাখ লাখ কৃষক তাঁবু গেড়ে দিল্লির প্রধান মহাসড়কগুলোর আশেপাশে আন্দোলন করছেন। বর্তমানে দিল্লির তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপরও কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সেখানেই অবস্থান করছেন কৃষকরা।

‘‘আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে এখানে থাকা খুবই কঠিন, তবে আমরা ভয় পাচ্ছি না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরব না। এ জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই আমাদের’’

আন্দোলনে অংশ নিতে পাঞ্জাবের পাতিয়ালা থেকে দিল্লি এসেছেন কৃষক বলবীর সিং। যার বয়স আশি’র ঊর্ধ্বে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে এখানে থাকা খুবই কঠিন, তবে আমরা ভয় পাচ্ছি না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরব না। এ জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই আমাদের’।

কৃষকরা জানান, গত নভেম্বরের শেষভাগ— যে সময় ট্রাক এবং ট্রাক্টরে করে কয়েক হাজার কৃষক নয়াদিল্লিতে এসে উপস্থিত হন এবং রাজধানীর সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে প্রতিবাদী অবস্থান নেন— সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত হিমশীতল আবহাওয়াজনিত কারণে মারা গেছেন প্রায় ৩০ জন কৃষক। যে মহাসড়কগুলোতে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান আরো ১০ জন।

গায়ে নীল রঙের কম্বল জড়ানো ৭৬ বছরের কৃষক পাঘ সিং বলেন, ‘আন্দোলনে আর কোনো প্রাণহানি চাই না, এবং আমাদের প্রত্যাশা একটাই— নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার এই আইন প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আমরা একটা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি এবং তাকে (নরেন্দ্র মোদি) আমাদের কথা শুনতে হবে’। 

সন্ধ্যা নামার পর যখন তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে আন্দোলনের প্রধান স্থানগুলোতে অসংখ্য ছোটো ছোট তাঁবু এবং তারপুলিনে মোড়ানো ট্রাক্টর-ট্রলিতে ছেয়ে যায়। আন্দোলনকারীদের রাত্রিযাপনের আশ্রয় ওগুলো। তবে সবার অবস্থা এক রকম নয়। এমনও আন্দোলনকারী রয়েছেন, যাদের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে।

সুরমিন্দার সিং এমনই একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘যতই ঠান্ডা হোক, আমার কিছু যায় আসে না। আমি ঠান্ডাকে ভয় করি না, মোদিকেও নয়। যতদিন না আইন বাতিল করা হচ্ছে, ততদিন আমাদের এই সংগ্রাম চলবে’।

আন্দোলনরত কৃষকদের বেশিরভাগই বয়োবৃদ্ধ। তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে যে কৃষি আইন পাস করা হয়েছিল তা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনকে চাপ দিতে প্রয়োজনে এই ভয়ঙ্কর শীত সহ্য করে নেবেন তারা। 

এসএমডব্লিউ/এএস