ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী চাপে আছে বলে স্বীকার করেছেন দেশটিতে আগ্রাসনের দায়িত্ব পাওয়া নতুন রুশ কমান্ডার। তার এই স্বীকারোক্তি বেশ বিরল। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য চাপে আছে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় এই ভূখণ্ড কয়েক সপ্তাহ আগে মস্কো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ঘোষণা দেয় এবং সেসব এলাকায় ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের চাপে রয়েছে রুশ সেনারা। বুধবার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর আট মাস পূর্ণ হতে চলেছে এবং রুশ কমান্ডারের এই স্বীকারোক্তি যুদ্ধক্ষেত্রের সত্যিকারের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাশিয়ার উদ্বেগকে সামনে তুলে এনেছে।

এছাড়া গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের কৌশলগত দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলের রাশিয়া-নিযুক্ত প্রধান ডিনিপ্রো নদীর আশপাশের চারটি শহর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সংগঠিত ভাবে এবং ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, খেরসনে রাশিয়ান বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পিছিয়ে গেছে এবং ডিনিপ্রোর পশ্চিম তীর পর্যন্ত রুশ বাহিনী পিছু হটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই নদীটি ইউক্রেনকে দ্বিখণ্ডিত করেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার কমান্ডার হিসেবে চলতি মাসের নিযুক্ত হন রুশ বিমান বাহিনীর জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নিউজ চ্যানেল রশিয়া ২৪ টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এলাকার পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হিসাবে অভিহিত করা যেতে পারে।

খেরসন সম্পর্কে জেনারেল সুরোভিকিন বলেছেন: ‘এই এলাকার পরিস্থিতি কঠিন। শত্রু ইচ্ছাকৃতভাবে খেরসনের অবকাঠামো এবং আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত করছে।’

ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে। যদিও রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে ইউক্রেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে তার দেশের হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ তার দাবি, তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান এবং ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের সুরক্ষা দিতে চান।

অন্যদিকে ভূখণ্ড দখলের জন্য মস্কোর বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে যুদ্ধের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা।

পূর্ব ইউক্রেনের কুপিয়ানস্ক ও লাইম্যানে রাশিয়ান সৈন্যদের অবস্থান এবং খেরসন প্রদেশের মাইকোলাইভ ও ক্রিভি রিহের মধ্যবর্তী অঞ্চল ইউক্রেনের অব্যাহত আক্রমণের অধীনে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সুরোভিকিন।

তিনি স্বীকার করেছেন, ডিনিপ্রোর পশ্চিম তীরে অবস্থিত খেরসন শহরের দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং রাশিয়ার পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড থেকে সেখানে পুনরায় কোনো ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করা বেশ কঠিন। কারণ ডিনিপ্রো নদীর প্রধান সেতু ইউক্রেনের বোমা হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আক্রমণের প্রথম দিকে রাশিয়া এই শহরটির বেশিরভাগই বিনা বাধায় দখল করেছিল এবং এটিই একমাত্র প্রধান ইউক্রেনীয় শহর যা মস্কোর বাহিনী অক্ষতভাবে দখল করে।

খেরসন অঞ্চলের রুশ-নিযুক্ত প্রধান ভ্লাদিমির সালদো বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলার ঝুঁকির কারণে চারটি শহর থেকে কিছু বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক ভিডিও বিবৃতিতে সালদো বলেছেন, ‘ইউক্রেন বড় আকারের আক্রমণের জন্য বাহিনী তৈরি করছে’।

তবে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে সামরিক বাহিনী কাজ করে, সেখানে বেসামরিকদের জন্য কোন স্থান নেই। রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে তার কাজটি সম্পন্ন করতে দিন।’

টিএম