ইসরায়েলে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত ঘাসান মাজালি (ফাইল ছবি)

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে জর্ডানের রাষ্ট্রদূতকে প্রবেশে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জর্ডান। একইসঙ্গে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছে দেশটি।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ পরিদর্শনের সময় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে পুলিশ বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে জর্ডান।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ‘তার সরকারের কাছে অবিলম্বে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কঠোর ভাষায় লেখা একটি প্রতিবাদের চিঠি’ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জর্ডান পরিচালিত জেরুজালেম ওয়াকফ বিভাগ আল-আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর তত্ত্বাবধানকারী একক কর্তৃপক্ষ বলেও চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিনান মাজালি বলেছেন, ‘দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে জেরুজালেম এবং এর পবিত্রতা বিশেষ করে পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রতি তার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।’

অধিকৃত জেরুজালেমে ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘ঐতিহাসিক স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, জর্ডানের রাষ্ট্রদূত ঘাসান মাজালিকে ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদের উত্তর দিকে লায়ন্স গেটে (বাব আল-আসবাত) থামিয়ে দেয় এবং সমন্বয়হীনতার অজুহাতে পবিত্র এই স্থাপনায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

অন্যদিকে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, ঘাসান মাজালি ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কোনও ধরনের পূর্ব সমন্বয় ছাড়াই’ পবিত্র এই স্থানে আসেন, যার কারণে স্থাপনাটির প্রবেশদ্বারে দায়িত্বরত অফিসার কূটনীতিককে চিনতে পারেননি।

ইসরায়েলি পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার সময় কর্মকর্তারা জেরুজালেম ওয়াকফের পরিচালক আজ্জাম আল-খতিবসহ রাষ্ট্রদূত মাজালিকে আটকে রাখেন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত অপেক্ষা করতে অস্বীকার করেন এবং চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আল জাজিরা বলছে, জর্ডান ১৯২৪ সাল থেকে জেরুজালেমের মুসলিম এবং খ্রিস্টান পবিত্র স্থানগুলোর আনুষ্ঠানিক অভিভাবক এবং জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষক হিসাবে সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল। ১৯২০ এর দশক থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর জিম্মাদারি রয়েছে জর্ডানের হাতে। কিন্তু যুদ্ধের পর সেটির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাত থেকে চলে যায়। এরপর ১৯৯৪ সালে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে জর্ডানের কাছে আবারও এর নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেয় ইসরায়েল।

মুসলমানদের কাছে আল-আকসা বিশ্বের তৃতীয়-পবিত্র স্থান। অন্যদিকে ইহুদিরা এই এলাকাটিকে টেম্পল মাউন্ট বলে থাকে এবং তাদের দাবি, এটি প্রাচীনকালে দু’টি ইহুদি মন্দিরের স্থান ছিল।

টিএম