অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে আয়ারল্যান্ড। নরওয়েতে এই টিকা গ্রহীতাদের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার খবরে দেশটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

রোববার এক টুইট বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিফেন ডনেলি। তিনি জানান, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়ে নরওয়ে থেকে নতুন তথ্য হাতে আসার পরই টিকা প্রয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার দেশ। টুইটে এটাকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

গত শনিবার নরওয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সম্প্রতি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে দেশটির তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার পক্ষেই কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির দাবি, টিকা নেওয়ার সঙ্গে মানবদেহের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি।

গত শুক্রবার ডব্লিউএইচও’র মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, মানবদেহের রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তার দাবি, করোনা প্রতিরোধে অ্যাস্ট্রাজেনেকোর টিকা খুবই ভালো এবং মানুষের মাঝে এটা প্রয়োগের কাজ অব্যাহত রাখা উচিত।

এর আগে টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও একজনের মৃত্যুর ঘটনার পর ডেনমার্ক ও নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রযোগ স্থগিত করে। এছাড়া অস্ট্রিয়াও এই টিকা প্রয়োগের কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির দাবি, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পরই তীব্র রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ৪৯ বছর বয়সী এক নার্সের মৃত্যু হয়।

এরপর এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লুক্সেমবার্গও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার একটি ব্যাচ বাতিল করে। এছাড়া টিকা নেওয়ার পর ইতালিতে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) বা রক্ত জমাট বেঁধে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও মারা গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) জানিয়েছে, ‘টিকা নেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এমনকি এটা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে; এর থেকে আসলে টিকা নেওয়ার লাভই বেশি। করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে এবং একইসঙ্গে টিকা নেওয়ার সঙ্গে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- সে বিষয়ে তদন্তও অব্যাহত থাকবে।’

সংস্থাটির দাবি, এ পর্যন্ত ইউরোপের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ করোনার এই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। এর আগে বুধবার ইএমএ জানায়, অস্ট্রিয়ায় ব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নার্সের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ডে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম