জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের ১১টি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া স্থগিত করার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার ওই টিকাটি নিয়ে পর্যালোচনা করতে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই টিকা দেওয়ার পর ‘ব্লাড ক্লট’ বা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ সময়ে এ ধরনের যত ঘটনা ঘটে এই সংখ্যা তার চেয়ে অস্বাভাবিক নয়।

ইইউভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যের এক কোটি ৭০ লাখ মানুষকে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৪০টির কম ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে 

ইউরোপের ওষুধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সিও আজ বৈঠক করবে। বৈঠকের পর ধারণা করা হচ্ছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি সিদ্ধান্ত জানাবে সংস্থাগুলো।

ইইউভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যের এক কোটি ৭০ লাখ মানুষকে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৪০টির কম ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

অপ্রমাণিত এই দাবির সঙ্গে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেনসহ ইউরোপের ১১টি দেশে এই টিকাটি প্রদান স্থগিত করার যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রতিদিন এই টিকার ওপর স্থাগিতাদেশ দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়ছেই। 

ইউরোপের ওষুধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইএমএ'ও এই মুহূর্তে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করছে।

অস্ট্রিয়াসহ কয়েকটি দেশে সতর্কতা হিসেবে নির্দিষ্ট ব্যাচে আসা টিকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া অব্যাহত রাখবে।

এদিকে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-ওচাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। তিনি এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের শুক্রবারে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা, কিন্তু ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই টিকা দেওয়া স্থগিত করার পর থাই কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মসূচি থামিয়ে দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কি বলছে?

রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোমবার সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনাগুলো টিকা দেওয়ার কারণে হয়েছে এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে সে সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন নিশ্চিত তথ্য ও প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে জনগণকে জানিয়ে দেবে বল জানান ওই কর্মকর্তা।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ বিষয়ক সংস্থা বলছে, টিকা দেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে, সে বিষয়ে প্রমাণ মেলেনি।

ইউরোপের ওষুধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইএমএ'ও এই মুহূর্তে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করছে। সংস্থাটি বলছে, টিকা দেওয়া চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। টিকার উপকারিতার তুলনায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনা এখনো অনেক কম।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ বিষয়ক সংস্থা বলছে, টিকা দেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে, সে বিষয়ে প্রমাণ মেলেনি, এবং দেশটির নাগরিকদের যথাসময়ে টিকা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কী বলছে?

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, টিকা দেওয়ার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এমন কোন প্রমাণ নেই।

সংস্থাটি বলছে, পুরো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্য মিলে যারা টিকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে ডিপ-ভেইন থ্রম্বোসিস ডিভিটি— মানে শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মোট ১৫টি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পালমোনারি এম্বোলিজম—মানে যেখানে জমাট বাঁধা রক্তের কণিকা ফুসফুসে চলে যাবার ২২টি ঘটনা ঘটেছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে ৬৫টি দেশে।

এই মূহুর্তে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা পৃথিবীর ৭০টি দেশে দেওয়া হচ্ছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে ৬৫টি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার টিকা ৩২ এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে ১৯টি দেশে। এছাড়া রাশিয়ার করোনা স্পুটনিক-৫ ১৭টি দেশে, চীনের সিনোভ্যাক ১১টি দেশে দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

এএস