করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে এক বছর আগে ফ্রান্সে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। তখন দেশটির সকল মানুষ গিয়েছিলেন আইসোলেশনে। তবে এবার আইসোলেশন নিয়ে গবেষণা বা পরীক্ষা শুরু হয়েছে দেশটিতে। স্থানীয় সময় রোববার (১৪ মার্চ) রাতে দেশটির ১৫ জন নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক আইসোলেশনে থাকতে ঢুকেছেন গুহার ভেতরে। সেখানে তারা থাকবেন একটানা দেড় মাস।

দেড় মাস পুরোপুরি আইসোলেশনে থাকার ফলে তাদের শরীর ও মনের ওপরে কী প্রভাব পড়ে; বিজ্ঞানীরা মূলত সেটাই পরীক্ষা করে দেখবেন। এই পরীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছে ডিপ টাইম। ফ্রান্সের দক্ষিণ তুলোসে অবস্থিত পিরানিজ পর্বত মালার বিস্তৃত লমব্রাইভস গুহায় অবস্থান নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের নেতৃত্বে আছেন ফরাসি-সুইস বংশোদ্ভূত ক্রিশ্চিয়ান ক্লট।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, টানা দেড় মাস আইসোলেশনে থাকার সময় এই স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে মোবাইল ফোন বা ঘড়ি থাকবে না। এমনকি দিনের আলোও দেখবেন না তারা। অর্থাৎ দিন-রাতের কোনো হিসাবও তারা রাখতে পারবেন না। তবে ন্যূনতম গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে গুহার মধ্যে আলাদা তাঁবুর ব্যবস্থা রয়েছে।

গুহায় প্রবেশের আগে স্বেচ্ছাসেবকদের দলনেতা ক্রিশ্চিয়ান ক্লট সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুহার মধ্যে তিনটি আলাদা থাকার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে প্রত্যেকেরই ন্যূনতম গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনটি জায়গার মধ্যে একটা অবস্থান করার জন্য, একটা ঘুমানোর জন্য এবং অপরটি গুহার মধ্যে কী কী প্রাণী বাস করে ও কোন ধরনের গাছপালা জন্মায় তা নিয়ে গবেষণার জন্য নির্ধারিত।’

এএফপি জানিয়েছে, ক্রিশ্চিয়ান ক্লট ছাড়া বাকি স্বেচ্ছাসেবকদের সাতজন নারী ও সাতজন পুরুষ। তাদের বয়স ২৭ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। গুহার ভেতরের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আদ্রতা ৯৫ শতাংশ। গুহার ভেতরে সেন্সর লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে এক ডজন বিজ্ঞানী সার্বক্ষণিক তাদের ওপর নজর রাখছেন।

প্যারিসের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সেস বিভাগের ডিরেক্টর এতিনে কোয়েচলিন বলছেন, ‘এ ধরনের গবেষণা এবারই প্রথম হচ্ছে। দীর্ঘ আইসোলেশনে থাকলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে কী প্রভাব পড়ে, তা এই পরীক্ষায় জানা যাবে।’

এতিনে কোয়েচলিন নিজেও এই গবেষণার মনিটরিং দলের অংশ। গবেষণার জন্য খরচ হচ্ছে ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। যার ব্যয় পুরোটাই বহন করছে ক্রিশ্চিয়ান ক্লটের প্রতিষ্ঠান হিউম্যান অ্যাডাপ্টেশন ইনস্টিটিউট।

সূত্র: এএফপি

টিএম