গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। নিহতদের ৯০ শতাংশকেই গুলি করে এবং তাদের এক-চতুর্থাংশকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ও স্থানীয় বিভিন্ন মিডিয়ার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

তবে জান্তা সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬৪ জন বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। যদিও রয়টার্স বলছে, হতাহতের এসব সংখ্যা তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

এরপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

এরপর নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোও।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাসিস্টান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) জানিয়েছে, ‘মিয়ানমারে প্রতিদিনই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।’

সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভের প্রথম থেকে সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত ও আটক হওয়া মানুষের হিসাব রেখে আসছে এএপিপি। সংস্থাটির দাবি, মার্চের ২৫ তারিখ পর্যন্ত তারা ৩২০ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু রেকর্ড করেছে। এসময় পর্যন্ত আটক করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষকে।

এএপিপি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহতদের ২৫ শতাংশকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে সন্দেহ বাড়ছে যে, মৃত্যু নিশ্চিত করতেই বিক্ষোভকারীদের মাথা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের ৯০ শতাংশ পুরুষ। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশের বয়স ২৪ বা তার কম। অবশ্য প্রতিটা মৃত্যুর জন্য আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত সবচেয়ে কম বয়সী বিক্ষোভকারীর নাম খিন মিও চিট। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় সাত বছর বয়সী এই শিশু বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এছাড়া গুলিতে নিহত সবচেয়ে বয়স্ক বিক্ষোভকারীর নাম উইন কিয়ি। মার্চের ১৪ তারিখে আরও ৫০ জন মানুষের সঙ্গে ৭৮ বছর বয়সী উইনকেও গুলি করে হত্যা করে সামরিক বাহিনী।

তবে অতিরিক্ত দমন-পীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তাদের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মেনেই কাজ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম