ভারতের দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে শুরু হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। শনিবার সকাল ৭টা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৩০টি এবং আসামের ৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত।

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলার একাংশে ১০ হাজার ২০০টি ভোটকেন্দ্রে ৭৩ লাখেরও বেশি ভোটার ভোট দেবেন শনিবার। অন্যদিকে আসামের পার্বত্য অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় এলাকার জেলাগুলোতে ১১ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট এইদিন ভোট দেবেন প্রায় ৮১ লাখ ভোটার।

ঝাড়গ্রামের একটি আসন ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের এই ৩০টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। ঝাড়গ্রামের ওই আসনটি স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে  তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপিও ২৯টি আসনেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছে, একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে মিত্র সংগঠন অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নকে (আসজু)।

এই দুই দল ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কংগ্রেস-সিপিএম জোট। ৩০ আসনের ২৭টিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। কংগ্রেস ৫ টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে, ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম এবং ৪ টিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জোটভূক্ত অন্যতম দল সিপিআই প্রার্থীদের।

অন্যদিকে আসামের ৪৭টি আসনের ৩৯টিতে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি, ১০টি আসন ছেড়ে দিয়েছে মিত্র সংগঠন অসম গণপরিষদকে (এজিপি)। এবারের নির্বাচনে ওই রাজ্যে বিজেপি-এজিপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী দিয়েছে ৪৩টি আসনে। এই জোটের অন্তর্ভূক্ত দলগুলো হলো কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, এজিএমের একাংশ এবং সিপিআই(এমএল)।

শনিবার পশ্চিমবঙ্গের যে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে, সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পটাশপুর ও রামনগরের আসনগুলোকে। বিশেষ করে মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনটি রয়েছে সবার মনযোগের কেন্দ্রে। তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে এই আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আর এ আসনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। গত ১৯ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু একসময় তৃণমূল নেত্রীর ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারিয়ে আসামে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল এবার দাঁড়িয়েছেন মাজুলি আসন থেকে। এই আসনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতা রাজীব লোচন পেগু, যিনি এর আগে পরপর তিনবার সেখানে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া এবারের আসাম নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শক্তিশালী দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন আসাম কংগ্রেসের সভাপতি রিপন বোরা এবং আসাম বিধানসভার স্পিকার হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী।

আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা তরুণ গগৈ গত নভেম্বর মারা গেছেন। তার আসন তিতাবরে এবার কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন করছেন আসাম রাজ্য কংগ্রেস নেতা ভাস্কর জ্যোতি বড়ুয়া। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপি প্রার্থী হেমন্ত কালিতা।

এদিকে বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে নজিরবিহীন নিরাপত্তা জারি করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সেনাসদস্যদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০০ কোম্পানি সেনাবাহিনী পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গে। এগুলোর মধ্যে ৬৫৯ কোম্পানির সেনাসদস্যরা শনিবারের নির্বাচনে নিরাপত্তা বিধানের কাজ করবেন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু ও আসাম— ভারতের এই চার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে বিধানসভা নির্বচনের তফসিল ঘোষণা করে ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ২৭ মার্চ থেকে এই রাজ্যগুলো ও পদুচেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী ২ মে।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪, তামিলনাড়ুর ২৩৪, আসামের ১২৬, কেরালার ১৪০ এবং পদুচেরির ৩০ আসনে ভোট হবে। পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফায় ভোট হবে, আসামে হবে ৩ দফায় ভোট। এছাড়া বাকি দুই রাজ্য ও পদুচেরিতে এক দফাতেই ভোটের কাজ শেষ করা হবে। এই অঞ্চলগুলোর মোট ১৮ কোটি ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন। বিহার নির্বাচনর পর করোনা আবহে এই প্রথম বড় ধরনের নির্বাচন আয়োজনে গিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ