হংকংয়ের নির্বাচনসংক্রান্ত্র বিধিতে পরিবর্তন আনছে চীন। মঙ্গলবারই (৩০ মার্চ) তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। শুধুমাত্র ‘দেশপ্রেমিক’ ব্যক্তিরাই যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতেই এই আইন সংস্কার করছে বেইজিং।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি হংকংয়ের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করবে। সমালোচকরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এই আইন বিরোধীদেরকে পার্লামেন্টের বাইরে রাখবে, যার অর্থ সেখানে গণতন্ত্রের অবসান ঘটবে।

চীনের এ পদক্ষেপের অর্থ হল- যেকোন সম্ভাব্য সংসদ সদস্যের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগেই পরীক্ষা করে দেখা হবে যে তিনি চীনের প্রতি যথেষ্ট অনুগত কি-না। অর্থাৎ, হংকংয়ের পার্লামেন্টে সরকারবিরোধী কেউ থাকবে না।

এর আগে হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে একটি প্রস্তাব পাস করে চীন। গত ১১ মার্চ চীনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) সম্মেলনে এই প্রস্তাবটি পাস হয়। এর ফলে ভূখণ্ডটিতে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম সীমিত হবে এবং বেইজিংপন্থি ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচিত হবেন বলে তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল।

প্রস্তাবিত এই আইনটি এখন বেইজিংয়ের এনপিসি স্ট্যান্ডিং কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এরপর সেটি হংকংয়ের মিনি সংবিধান নামে পরিচিত ‘ব্যাসিক ল’ বা ‘মৌলিক আইনে’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসবে
পরিকল্পনা অনুযায়ী হংকংয়ের পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ৭০টি থেকে বেড়ে ৯০টি হবে। কিন্তু এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- পার্লামেন্টের এমপি অর্থাৎ লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুকদের আগে যাচাই-বাছাইয়ের (ভেটিং) মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ফলে চীনের সমালোচক কোনো রাজনীতিককে নির্বাচনী লড়াইয়ের আগেই বাদ দেওয়া সম্ভব হবে।

বেইজিংপন্থিদের সমন্বয়ে সেই কমিটি গঠন করা হবে। তাদের কাজ হবে, চীনের সমালোচক কোনো রাজনীতিককে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে নিষিদ্ধ করা।

এখন লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের অর্ধেক সদস্যকে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় এবং অতীতে এমন কিছু আসনে গণতন্ত্রপন্থীরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর বাকি অর্ধেক আসনগুলোতে মূলত ব্যবসা, বাণিজ্য কিংবা ব্যাংকিংখাতের মতো খাতগুলো থেকে নেওয়া হয়, যেগুলো আসলে ঐতিহাসিকভাবেই বেইজিংপন্থি হিসেবে পরিচিত।

২০২০ সালের নভেম্বরে হংকংয়ের বেইজিং-বিরোধী অনেক আইনপ্রণেতাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। যার জের ধরে একপর্যায়ে পুরো লেজিসলেটিভ কাউন্সিলই পদত্যাগের দিকে এগিয়ে যায়। এখন বেইজিং বিরোধীদের নির্বাচনী ব্যবস্থার বাইরে রাখা গেলে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি হয়তো হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

চলতি বছর হংকংয়ে অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশোধিত ব্যবস্থা কার্যকর হবে কি-না তা এখনও পরিষ্কার নয়।

হংকংয়ের মৌলিক আইনটি পাল্টে ফেলা হচ্ছে?
হংকং’স ব্যাসিক ল বা মৌলিক আইনটি ভূখণ্ডটির মিনি সংবিধান নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে হংকংকে বেইজিংয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সময় ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটাই মূলত মৌলিক আইন। এখন সেই আইনটিই পাল্টে ফেলা হচ্ছে কি-না তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।

হংকংয়ের বেইজিংপন্থি শিবির বলছে, সংবিধান পাল্টে ফেলা হচ্ছে না, তবে গণতন্ত্রপন্থিরা বলছেন- নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে মূলত সেটিই করা হচ্ছে।

এর আগে হংকংকে নিয়ে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে চীনের চেয়ে হংকংয়ে বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। এই চুক্তি ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’র অধীনে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা। কিন্তু দায়িত্ব নিয়েই অঞ্চলটিতে নিজের প্রভাব বাড়ানোর কাজ শুরু করে বেইজিং। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করে আসছে চীন।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক ইয়ান চং বলছেন, ‘কার্যত বেসিক ল’র পরিবর্তন এটা নয়। তবে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের যে চেতনা বা সার্বজনীন ভোটাধিকারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।’

উল্লেখ্য, হংকংয়ের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হংকংয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণেই বেইজিং নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

টিএম