ছেলের বিয়েতে গিয়ে মা আবিষ্কার করলেন, হবু পুত্রবধূ আসলে বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার নিজেরই মেয়ে। মেয়ের হাতে থাকা জন্মদাগ দেখে নিজের মেয়েকে তিনি চিনতে পারেন। নিশ্চিত হয়ে যান যে, হবু পুত্রবধূ আর কেউ নয়, তার হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়ে। গত ৩১ মার্চ চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুঝৌউ এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা।

ছেলেকে বিয়ে দিতে বর সাজিয়ে ওই নিয়ে গিয়েছিলেন বিয়ের আসরে। সব আয়োজন সম্পন্ন, সেই বিয়েটিও সম্পন্ন করতে সবার ব্যস্ততা। সেখানে হঠাৎ হবু বৌমা’র হাতে জন্মদাগের ওপরে দৃষ্টি আটকে যায় ওই নারীর।

সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় নিজের হারিয়ে যাওয়া মেয়ের কথা! ২০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তান... ছোট্ট একটা হাত... সেখানেও যে ঠিক এমনই একটা দাগ ছিল! দেরি না করে ছুটে যান মেয়েটির বাবা মার কাছে। জানতে চান, তারা মেয়েটির জন্মদাতা পিতা-মাতা কি না।

এই প্রশ্ন শুনে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যান পাত্রীর বাবা মা। কারণ মেয়েকে দত্তক নেওয়ার কথাটা কেউই জানত না, কাউকেই বলেননি তারা। এমনকি, ওই মেয়ে নিজেও জানত না। পুরোটাই গোপনে রেখেছিলেন। কিন্তু পাত্রের মা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করায় সত্য আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। খোলসা করে দেন গোটা বিষয়টি।

পাত্রীর বাবা মা জানান, বহু বছর আগে রাস্তার ধারে তাদের মেয়েকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। তারপর থেকে নিজের সন্তানের মতো করেই সবার সামনে পরিচয় দিয়েছেন, মেয়েকে বড় করে তুলেছেন।

মেয়ের মা-বাবার উত্তর শুনে ওই নারী বুঝতে পারেন, ছেলের হবু বউ আর কেউ নয়, তার সেই অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে!

বিয়ের অনুষ্ঠানে তখন যেন আর কারও মনোযোগ নেই; বর হতভম্ব-বিব্রত। আসরে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে চলছে ফিসফাস কথা। পুরো ঘটনাটি জানার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বিয়ের কনে।

নিজের প্রকৃত বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান ওই যুবতী। তিনি বলেন, এটা বিয়ের থেকেও অনেক বেশি আনন্দের মুহূর্ত আমার কাছে।

তবে এখানেই যেন গল্পের শেষ নয়। কয়েক মিনিট পরে বিয়েতে আপত্তি জানান ওই মেয়ে। তার কথায়, এ বিয়ে তো সম্ভব নয়। কারণ, তার হবু বর যে তারই আপন ভাই! এ বিয়ে হয় কিভাবে?

তবে তাকে আশ্বস্ত করেন মা নিজেই। মেয়েকে তিনি জানান, তার ছেলের সঙ্গে বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই তার। কারণ এই ছেলে তার গর্ভের সন্তান নয়। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে কিছুদিন পরে এই ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। ছেলেও অবশ্য জানত না যে, সে দত্তক নেওয়া সন্তান। যেহেতু দু’জনের মধ্যে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই, তাই এই বিয়েতেও বাধা নেই। এরপর দুই বাবা-মা নিজেরাই বিয়ে দেন তাদের।

বিয়ের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ফের ঘরে তুলে মা বললেন, ‘কুড়ি বছর ধরে যে দুঃস্বপ্নের ভার বয়ে চলেছি, আজ তা থেকে মুক্ত হলাম।’

সূত্র: ডেইলি মেইল

টিএম