লাহোরে পুলিশের সদর দফতরে জিম্মিদশা, প্রাণঘাতী সংঘর্ষ
লাহোরে পুলিশের সদর দফতরে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্যকে জিম্মি করেছে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাব্বাইক-পাকিস্তান (টিএলপি)। দেশজুড়ে সহিংসতার অভিযোগে গোষ্ঠীটির প্রধান নেতা আল্লামা সাদ হুসাইন রিজভিকে এক সপ্তাহ আগে গ্রেফতারের ঘটনায় রোববার লাহোরে পুলিশের সদর দফতরে এই জিম্মিদশা তৈরি করেছে টিএলপি।
ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের দায়ে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারে টিএলপি আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের হাজার হাজার ইসলামপন্থীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। দেশটির কট্টরপন্থী দল টিএলপির নেতা আল্লামা সাদ হুসাইন রিজভিকে গত সোমবার গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
আল্লামা সাদকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন শুরু করে টিএলপি। রোববার টিএলপির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারের বেশি। দেশজুড়ে সহিংস তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার টিএলপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বিজ্ঞাপন
লাহোর পুলিশের মুখপাত্র আরিফ রানা রয়টার্সকে বলেন, রোববার টিএলপির সমর্থকরা লাহোরে পুলিশের সদর দফতরে জিম্মিদশা তৈরি করেছে। পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আধা-সামরিক বাহিনীর দুই সদস্যসহ ছয়জনকে জিম্মি করেছেন টিএলপির সমর্থকরা।
জিম্মিদশার অবসানে অভিযান চলছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, টিএলপির কর্মীরা দুটি জ্বালানি ট্যাঙ্কার নিয়ে পুলিশের সদর দফতরে হামলা করেছেন। এ দুই ট্যাঙ্কারে হাজার হাজার লিটার পেট্রোল রয়েছে। তারা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ও পাথর নিক্ষেপ করছেন। এর পাশাপাশি নিষিদ্ধ এই গোষ্ঠীর সদস্যরা গুলিবর্ষণ করেছেন। এতে অন্তত ১১ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
টিএলপির মুখপাত্র শফিক আমিনি বলেন, রোববার পুলিশ টিএলপির চার সমর্থককে হত্যা করেছে এবং আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। গত সপ্তাহে এই গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলে তাদের খবর প্রকাশও বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। রোববার ইসলামাবাদ, লাহোর-সহ সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানে ফ্রান্সবিরোধী সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে ইসলামাবাদের ফরাসি দূতাবাস পাকিস্তানে অবস্থানরত ফরাসি নাগরিকদের সাময়িকভাবে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানে ফরাসি স্বার্থের জন্য গুরুতর হুমকির নিয়ে সতর্ক করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে ফ্রান্স ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নবী মোহাম্মদ (সা.) এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে সময় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস