ভারতের মহারাষ্ট্রের চিকিৎসক ডা. ত্রুপ্তি গিলাদা

ভারতে করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আবার পুরো ভারতের মধ্যে মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। হাসপাতালে কোনো শয্যা, এমনকি জায়গাও খালি নেই। রোগীদের দেওয়ার মতো নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেনও। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়ছে কোভিড রোগীদের সংখ্যা।

এই পরিস্থিতি সবচেয়ে সামনে থেকে মোকাবিলা করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীদের সেবার কাজে তাদের হতে হয় কঠোর ও দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন মানুষ। কিন্তু করোনা মহামারির ভয়াবহতা যেন চিকিৎসকদেরও দুর্বল করে দিচ্ছে, অসহায়ত্ব অনুভব করছেন প্রতিটি পদে পদে।

তেমনই মহরাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ত্রুপ্তি গিলাদা নামে এক নারী চিকিৎসক। হাসপাতালে শয্যা নেই, রোগীদের দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সংকট, প্রতিদিনই রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নারী চিকিৎসকের কান্নার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রায় ৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আগে এ রকম পরিস্থিতি কখনও দেখিনি। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়ছি। বহু চিকিৎসকের মতোই আমিও আতঙ্কিত। জানি না কী করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘(মানুষের কষ্ট দেখে) আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমার চিন্তার বিষয়গুলোই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। আমি যদি আপনাদের কিছু বোঝাতে পারি, তবেই আমি শান্তি পাবো।’

ডা. ত্রুপ্তি গিলাদা বলেন, ‘অনেক বেশি পরিমাণ রোগীকে আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে। যাদের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক তারা বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারণ হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। এটা আমাদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’

এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না ঠেকানোর চেষ্টা করার পরও তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। তবে এই পরিস্থিতিতেও নিজের কর্তব্য ভোলেননি ত্রুপ্তি গিলাদা। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এসময় তিনি বারবার মানুষের প্রতি অনুরোধ জানান। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করার অনুরোধের পাশাপাশি অসুস্থ বোধ করলে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন ত্রুপ্তি। তার মতে, নারী, পুরুষ ও শিশু অর্থাৎ প্রতিটি মানুষকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।

ডা. ত্রুপ্তি বলেন, ‘সবাই নিরাপদে থাকুন। আপনি যদি এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত না হয়ে থাকেন... বা আক্রান্ত হয়েও কেউ যদি সুস্থ হয়ে থাকেন... তাহলে নিজেদেরকে সুপার হিরো ভাববেন না, বা মনে করবেন না আপনারা আর আক্রান্ত হবেন না। এটা ভেবে থাকলে ভুল হবে। অনেক অনেক অল্পবয়সী মানুষকে আমরা আক্রান্ত হতে দেখছি। এবং আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।’

ভাইরাসের এই ব্যাপক সংক্রমণে ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা সাড়ে ২১ লাখ ছাড়ালেও এর মধ্যে ৬২ দশমিক ০৭ শতাংশ রোগীই ৫টি রাজ্যের। সেগুলো হচ্ছে- মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তিশগড় ও কেরালা।

ভারতের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রে। প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটিতে মারা গেছে ৫১৯ জন।

এদিকে সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনও জারি করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে সোমবার থেকে চলছে লকডাউন। মহারাষ্ট্রেও ‘করোনা কারফিউ’ চলছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সপ্তাহান্তে চলছে লকডাউন। রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে।

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম