যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন নার্স ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেওয়ার প্রায় ১১ দিনের মাথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থানীয় দু’টি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ম্যাথিউ ডব্লিউ নামের ৪৫ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি গত ১৮ ডিসেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, তিনি ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা নিয়েছেন। 

টিকা নেওয়ার পর বাহুতে ব্যথা অনুভব করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র একদিন। এছাড়া আর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তিনি বোধ করেননি।

এবিসি নিউজ

মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম বলছে, ক্রিসমাস ইভের ৬ দিন পর হাসপাতালের কোভিড -১৯ ইউনিটে কাজ করার সময় অসুস্থ বোধ করেন তিনি। প্রথমে শীত শীত অনুভব করতে থাকেন এবং পরে মাংসপেশীতে ব্যথা ও ক্লান্তি বোধ করার মত উপসর্গও দেখা দেয়। 

এরপরই তিনি টেস্ট করাতে হাসপাতালে ছুটে যান এবং টেস্টের ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্যামিলি হেলথ সেন্টার অব সান ডিয়াগোতে কর্মরত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিয়ান রেমার্স অবশ্য বলেন, এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়।  

তিনি বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় দেখা গেছে, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দেহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী উপাদান তৈরি হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৪ দিন।’

‘প্রথম ডোজ নেওয়ার পর মানবদেহে ৫০ শতাংশ প্রতিরোধী উপাদান তৈরি হয়। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তা উন্নীত হয় ৯৫ শতাংশে।’

মার্কিন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিয়ান রেমার্স

এর আগে, গত ২৫ ডিসেম্বর দেশটিতে জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মডার্নার উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হোসেন সদরজাদেহ নামে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন এলাকার একজন চিকিৎসক।

সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা নেওয়ার পর দেখা দেয়া পাঁচ ধরনের অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে তারা গবেষণা করছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউ চলছে। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ১৭ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি।

করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি

• গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।

চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি।

• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে।

• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে।

• ১১ মার্চ ‌‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্বে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে একক কোনও দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনা করোনা নীতির কারণে দেশটিতে এই ভাইরাসে বুধবার পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৩ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি এবং আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৯৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৪ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনা সংক্রমণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত; দেশটিতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার।

সূত্র: এনডিটিভি।

এসএমডব্লিউ/এসএস