ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এখনও অব্যাহত আছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা। টানা হামলায় গুড়িয়ে গেছে গাজার বেশ কিছু বহুতল ভবন, নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে।

গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৮, তাদের মধ্যে ১০ জন শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৭ শতাধিক।

তবে এই সংঘাতের বিবদমান দু’পক্ষ— ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

হামাসের শীর্ষ নেতা ও মুখপাত্র ইসমাইল হানিয়ে মঙ্গলবার এক টিভি ভাষনে বলেছেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। যদি ইসরায়েল তার হামলা অব্যাহত রাখে, তার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি যেমন আমাদের আছে, তেমনি ইসলায়েল যদি শান্তি চায়, সেক্ষেত্রেও প্রস্তুত আমরা।’

একই দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েলে হামলার জন্য এই জঙ্গিদের অনেক বড় মূল্য দিতে হবে।’

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত রোববার (৯ মে)। গত বেশকিছুদিন ধরেই গাজা এলাকায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলছিল জেরুজালেমে। রোববার (৯ মে) লাইলাতুল কদরের রাতে আল আকসায় নামাজ আদায় শেষে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা বিক্ষোভ শুরু করলে তা দমন করতে তৎপর হয় ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ওই দিনের সংঘাতে অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছিলেন। সংঘর্ষের পর থেকে আল আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।

এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।

কিন্তু ইসরায়েলের সরকার এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ইসরায়েলের সেনবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন সন্ধ্যা থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত মোট ১৩০ টি রকেট ছুঁড়েছে হামাস।

১০ মে সন্ধ্যায় হামাস রকেট হামলা শুরু করার কিছুক্ষণ পরই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে গাজার বেশ কয়েকটি ভবন।

সহিংসতার নেপথ্যে

১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। গোটা শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী।

সেখানে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার শঙ্কা দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। ফলে বাস্তুভিটা রক্ষায় নিজেদের সাধ্যমতো প্রতিরোধের চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনিরা।

জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে, যেন যে কোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং ‘বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়।’

ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগ।  

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবানে কাজ হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, গাজা এলাকায় ইসরায়েলের উচ্ছেদ অভিযান থেমে নেই।

সূত্র: আল জাজিরা

এসএমডব্লিউ