অবরুদ্ধ গাজা সীমান্ত অভিমুখে ইসরায়েলের সামরিক যান

গত কয়েকদিনে বোমা, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইসরায়েল। গাজা সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে, নেওয়া হয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

বিবিসি দেশটির সামরিক বাহিনীর বরাতে এই তথ্য জানিয়ে লিখেছে, ইসরায়েলি সেনারা সম্মুখ সমরের প্রস্ততি নিচ্ছে। ২০০৮-০৯ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে সামরিক সংঘাত অর্থাৎ যুদ্ধের আগ মুহূর্তেও ইসরায়েলকে এমন প্রস্তুতি নিতে দেখা গিয়েছিল।    

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘সীমান্ত (গাজা) অভিমুখে অতিরিক্ত আরও সেনা পাঠানো হয়েছে।’ পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।  

তেল আবিবের ওই সামরিক মুখপাত্র আরও বলেন, রিজার্ভে থাকা অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা সদস্য পাঠানো হয়েছে সেখানে। সীমান্তের সামরিক কর্মকর্তাদের ইসরায়েল সরকার ‘সব রকমের সম্ভাব্য ঘটনা এবং একটি সংঘাতের’ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘তারা যুদ্ধের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। মূলত তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা সাধারণত এটাই করে থাকে। কিন্তু এমনটা নয় যে আমরাই আগে শুরু করবো। আমাদের মনযোগ থাকবে শত্রুদের প্রতিরোধ করা।’

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে গত ৯ মে পবিত্র শবে কদরের নামাজ শেষে আল-আকসা চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা। এরপর ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী স্টান গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। 

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমনাভিযানে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ। তারপর সেখানে গণহারে ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার শুরু হয়।

এরপর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসকগোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম দিয়ে জানায়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।

ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বসে ঈদের নামাজ আদায় করছেন ফিলিস্তিনিরা।

হুমকি আমলে না নিলে ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ইসরায়েল পাল্টা বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করলে ১৭ শিশুসহ কমপক্ষে গাজার অধিবাসী ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় সহস্রাধিক।

ইসরায়েলের নিয়মিত হামলার মধ্যে ধ্বংসস্তুপের ভেতর বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদ উদ্‌যাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা। বৃহস্পতিবার সকালেও সেখানে বোমা হামলা অব্যাহত ছিল। অনেক ফিলিস্তিনির ঘুম ভেঙেছে বোমার শব্দে। রাত থেকে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

এদিকে হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত এক শিশুসহ ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি জ্বালানি কোম্পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পাইপলাইনে রকেট আঘাত হানার পর তাতে আগুন ধরে বলে জানা গেছে।

সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যে সংঘাত চলছে, তাতে এবার প্রায় সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

বৃহস্পতিবার টু্ইট বার্তায় বাইডেন বলেন, ‘জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে অবশ্যই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কারণ, ইসরায়েলের নাগরিকরা প্রতি মুহূর্তে রকেট হামলার আতঙ্কে আছে। তাই আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েল যা করছে, তাতে আমাদের প্রশাসনের সমর্থন আছে।’

চলমান এ উত্তেজনা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহিংস আচরণের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর ও প্রতিরোধমূলক শিক্ষা দেওয়া উচিত।

এএস