অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির পর মঙ্গলবার থেকে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সফরের প্রথম দিনেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্লিঙ্কেন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে কার্যকর যুদ্ধবিরতি টেকসই করার ওপর জোর দিয়েছেন। ১১ দিন রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলার পর মিসরের মধ্যস্থতায় গত ২১ মে রাতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যাতে লাভবান না হয় সেটা তারা নিশ্চিত করবেন। তিনি ইসরায়েলকেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, সেদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ‘আমেরিকা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেরুজালেমে দূতাবাস খুলছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করতে অর্থসাহায্য করবে ওয়াশিংটন।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১১ দিনের তীব্র লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আড়াইশ'র বেশি মানুষ। যাদের অধিকাংশই গাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে শতাধিক নারী ও শিশু রয়েছে।

ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় যান এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমি এখানে বলতে চাই যে, ফিলিস্থিতি কর্তৃপক্ষ এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুর্নগঠনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই সম্পর্ক গঠিত হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিরা স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা ও মানবিক মূল্যবোধের বিচারে সমান বলে আমেরিকার বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক আমরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

ফিলিস্তিনিরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে তা প্রত্যাখান করেছিল।

ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনের জন্য সহায়তা আবার চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন, যা তার পূর্বসুরী বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বন্ধ করে দেওয়া দূতাবাসগুলোও আবার খোলার অঙ্গীকার তিনি করেন।

ব্লিঙ্কেন ঘোষণা করেছেন যে, জেরুজালেমের কনস্যুলেট আবার চালু করার মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিনের জনগণকে সাহায্যদান এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার’ প্রক্রিয়া আমেরিকা আবার শুরু করতে চায়।

এই কনস্যুলেট ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের বিষয়াবলী দেখাশোনা করত। পরে ইসরায়েলে বিতর্কিত নতুন দূতাবাস খুলে ট্রাম্প প্রশাসন এই কনস্যুলেটের কার্যক্রম সেখানে সরিয়ে নিয়ে যান। এর ফলে ফিলিস্তিনে আমেরিকান দূতাবাসের কার্যক্রম গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

ফিলিস্তিনি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা বা পিএলও-র দফতর আবার খোলার বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। এই অফিসও ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যে তিনদিনের সফরের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরে এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আমেরিকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি এবং শান্তি, নিরাপত্তা এবং সবার জন্যই সম্মান ও মর্যাদার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি।’

অবশ্য নেতানিয়াহুও ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার বিষয়টির’ ওপর জোর দিয়ে দাবি করেন, ‘হামাস যদি শান্তি ভঙ্গ করে আক্রমণ চালায়, তাহলে ইসরায়েল খুবই কঠোরভাবে তার জবাব দেবে।’

জাতিসংঘ বলছে, সাম্প্রতিক এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪২ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৬৬ জন শিশু এবং ৩৮ জন নারী। মানবাধিকার বিষয়ক দফতর নিশ্চিত করেছে যে, নিহতদের মধ্যে ১২৯ জনই বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক।

অন্যদিকে হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জন শিশু এবং তিনজন বিদেশি নাগরিক। হামাসের ছোঁড়া রকেটে বা রকেট হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাওয়ার সময় তারা নিহত হন বলে ইসরায়েলের মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিএম