ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপিতে দেখা দিয়েছে ভাঙনের সুর। দল ছাড়তে পারেন বিজেপির বেশ কয়েক জন বিধায়ক। যোগ দিতে পারেন টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসে। ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে এমন জল্পনা বাড়ছে রাজ্য রাজনীতিতে।

সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়ে তৃণমূল শিবির দাবি করেছে, শুধু ৭-৮ জন বিধায়কই নন, বিজেপির ৩ সাংসদও ফিরতে চাইছেন তাদের দলে। অবশ্য প্রকাশ্যেই তৃণমূলের সেই দাবি অস্বীকার করছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু অন্তত ৭ জন বিধায়ক দল বদল করে ফের মমতার দলে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে বিজেপি শিবিরেও।

সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ২০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যপূরণে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল গোটা দল। কিন্তু ২ মে ভোটের ফল প্রকাশের দিনে অমিত শাহের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যের ধারে-কাছেও পৌঁছয়নি বিজেপি। ২০০ তো দূরের কথা, ১০০ আসনও পায়নি তারা। সর্বসাকুল্যে ৭৭ আসনেই থেমে গেছে গেরুয়া রথ।

এর মধ্যে আবার নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার নামে দুই বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ বিজেপির হাতে এখন ৭৫ জন বিধায়ক। সেটাও ৫ বছর সামলে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তা। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ইতোমধ্যেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তার দাবি, বিজেপির ৩ জন সাংসদ এবং ৭-৮ জন বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ বলছে, ৩ বিজেপি সাংসদের দিকে ইঙ্গিত করছে তৃণমূল। তাদের একজন উত্তরবঙ্গের, একজন রাঢ়বঙ্গের এবং আর একজন দক্ষিণবঙ্গের। কিন্তু যে ৭-৮ জন বিধায়কের কথা বলা হচ্ছে, তাদের কারও নাম খোলসা করেনি তৃণমূল।

তবে বিজেপির ভেতরের সূত্র দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩জন বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে সংশয় রয়েছে। নদীয়া থেকে নির্বাচিত দুই বিধায়ক ছাড়াও রাঢ়বঙ্গের ১ ও দক্ষিণবঙ্গের ২ বিধায়ককে নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব।

প্রকাশ্যে অবশ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দলত্যাগ করবেন না। সবাই দলে থাকবেন। প্রতিনিধিদের ওপরে বিজেপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’

বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে যা-ই বলুন, দলের ভেতরে গুঞ্জন পেয়েছে নতুন মাত্রা। ৭৫ জন বিধায়কের মধ্যে যাদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক এখনও তেমন নিবিড় নয়, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে। দলে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি বার্তা ছড়ানো হচ্ছে, বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎও খুব ভালো। এমন দ্বি-কৌশল কতটা সফল হয়, তার ওপরেই এখন নির্ভর করছে বিজেপির ঘর অটুট থাকবে না ভাঙবে?

টিএম