একেকটি আমের ওজন পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে

ফলের রাজা আম। তবে রাজা না বলে রানি বলাই শ্রেয়। কারণ রানি যে আম, আর তার নামও নুরজাহান। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের পত্নীর সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। যদিও ‘ওজনে’ এই নুরজাহান কিন্তু রানি নুরজাহানকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ভারতের একমাত্র একটি রাজ্যেই এই আমের চাষ হয়। এর চাহিদা এতটাই যে, এক একটি আম বিক্রি হয় ৫০০ থেকে এক হাজার রুপিতে! বাংলাদেশি প্রায় ১২০০ টাকা।

কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, গুজরাট সীমান্তের কাছে ইনদোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলা। জেলার কাট্ঠিওয়ারাতেই একমাত্র এই আমের চাষ হয়। মাত্র কয়েকটি এই আমের গাছ রয়েছে সেখানে।

তবে নুরজাহান নামের এই আমের উৎপত্তি আফগানিস্তানে। কীভাবে আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসে পৌঁছাল এই গাছের প্রজাতি, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তার এ রকম অদ্ভুত নামকরণের সঙ্গে সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, সেটিও স্পষ্ট নয়।

কাট্ঠিওয়ারার এক নুরজাহান আমচাষি শিবরাজ সিংহ জানিয়েছেন, ১৯৬৮ সালে এই আমের চারা গুজরাটে আনা হয়েছিল। তার বাবা ঠাকুর পি সিংহ গুজরাট থেকে ওই বছর চারাগাছ কিনে মধ্যপ্রদেশে আনেন। মধ্যপ্রদেশের কাট্ঠিওয়ারায় তাদের বাগানে ওই চারাগাছগুলো পুঁতেছিলেন তিনি। সেগুলো আজও ফল দিয়ে চলেছে।

তার বাগানে সর্বমোট ৬টি নুরজাহান আম গাছ রয়েছে। প্রতি বছরই তাতে ফল ধরে। তবে গত বছর আবহাওয়ার জন্য ফলন ভাল হয়নি বলে জানান তিনি। চলতি বছর এক একটি আম কত টাকায় বিক্রি হয়েছে জানেন? এক-একটি আম বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ১০০০ রুপিতে। আমের ওজন অনুযায়ী দাম নিয়েছেন চাষীরা।

শিবরাজের বাগানে চলতি বছর মোট ২৫০টি নুরজাহান আম ফলেছে। আম পাকার অনেক আগে সেগুলো গাছে থাকা অবস্থাতেই কিনে ফেলেছেন আম প্রিয় লোকজন। এই আমের চাহিদা এমনই। হবে না কেন? এক একটি আমের ওজনই সদ্যোজাত মানবশিশুর সমান। শিবরাজের বাগানে যে আমগুলো ফলেছে, তাদের প্রত্যেকটির ওজন ন্যূনতম ২ কেজি! এমনকি সাড়ে ৩ কেজি ওজনের আমও ফলেছে!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে একটি নুরজাহান আমের ওজন হতো অন্তত ৫ কেজি। যা লম্বায় হতো ১ ফুট পর্যন্ত! জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নুরজাহানের চেহারায় অনেক বদল এসেছে। দৈর্ঘ্যও কমেছে, কমেছে ওজনও। কিন্তু আমভক্তদের কাছে কদর এতটুকু কমেনি তার।

মধ্যপ্রদেশ সরকার এই বিরল প্রজাতির আম গাছ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিরল প্রজাতির আমের জন্য পেটেন্টের আবেদনও করেছে।

এসএস