বৈঠকের প্রথম দিনে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা বিতরণের কথা ঘোষণা করেছেন জি৭ নেতারা। শুক্রবার (১১ জুন) থেকে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে শুরু হয়েছে জি৭ ভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের বৈঠক।

তবে বৈশ্বিক দাতা সংস্থাগুলো তাদের এ ঘোষণায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাদের বক্তব্য, বর্তমান মহমারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও অধিকসংখ্যক করোনা টিকার ডোজ প্রদানের অঙ্গীকার করা উচিত বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলে পরিচিত জি৭ জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর।

শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন জি৭ নেতৃবৃন্দ। জোটের অন্যতম নেতা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন, এবারের বৈঠকে বিশ্বের সব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে পর্যাপ্ত করোনা টিকার ডোজ সরবরাহে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাবেন তিনি।

দেখা গেল, বৈঠকের শুরুতেই এ ব্যাপারে তার সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন জি৭ এর সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কল ও ফান্সের রাষ্ট্রপতি ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। শুক্রবারের যৌথ বিবৃতিতে তাদের সবারই স্বাক্ষর আছে।

এ প্রসঙ্গে পরে এক বার্তায় বরিস জনসন বলেন, ‘আমাদের সবার এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রয়োজন যে, বিশ্ব অর্থনীতিকে মেরামত করে আবার মহামারিপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে।’

‘আরও একটি ব্যাপারে (আমাদের সবার) একমত হওয়া প্রয়োজন যে, একবার এই দুর্যোগ যখন আমরা কাটিয়ে উঠব, আমাদের সার্বিক অবস্থা মহামারিপূর্বের চেয়েও ভালো এবং উন্নততর হবে। জি৭ এই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে।’

মহামারির কারণে প্রায় দু’বছর পর সশরীরে উপস্থিত হয়ে বৈঠক করছেন জি৭ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারপ্রধানরা। গত বছরও তাদের বৈঠক হয়েছিল, তবে সেটি হয়েছিল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে।

বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবারই এয়ার ফোর্স ওয়ানের বিশেষ উড়োজাহাজে ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে পৌঁছান জো বাইডেন। তারপর একে একে আসেন অন্যান্য নেতারাও।

এদিকে, জি ৭ জোট নেতাদের এই ঘোষণার সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবিক সহযোগিতা ও দাতাসংস্থা অক্সফাম জানিয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি উত্তরণে যেখানে ১১০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা প্রয়োজন, সেখানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ৭ দেশ থেকে মাত্র ১০০ কোটি ডোজ টিকা প্রদানের অঙ্গীকার ‘হতাশাজনক’।

সংস্থাটির স্বাস্থ্যনীতি ব্যবস্থাপক আন্না ম্যারিয়ট কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘যদি জি৭ নেতারা তাদের বৈঠকে মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডোজ করোনা টিকা বিতরণের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান, তাহলে আমরা বলব এবারের বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রয়োজন অন্তত ১১০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে বর্তমানে টিকার যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, দান-খয়রাতের মাধ্যমে তার সমাধান হবে না। মহামারিকে কেন্দ্র করে বড় বড় ওষুধ কোম্পনিগুলো যে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে, বিশ্বনেতাদের উচিত তা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেন করোনা টিকার ডোজ উৎপাদন হতে পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ম্যাক্রোঁ টিকার মেধাস্বত্ত্ব তুলে নেওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন, জি৭ জোটের অন্যান্য নেতাদের উচিত তাদের অনুসরণ করা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসবাসরত কোটি কোটি মানুষের জীবন শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলোর দয়া ও ওষুধ কোম্পানীগুলোর মুনাফালোভের ওপর নির্ভর করে থাকতে পারে না।’

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা দাতা সংস্থা ওয়েলকামের পরিচালক অ্যালেক্স হ্যারিস এ বিষয়ে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭ যে টিকা বিতরণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা সময়োপযোগী, কিন্তু এতে দীর্ঘমেয়াদে উপকার আসার সম্ভাবনা কম। দীর্ঘমেয়াদে উপকারে আসবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত তাদের নেওয়া উচিত এবং সেগুলো দ্রুত নেওয়া উচিত।’

সূত্র: আল জাজিরা

এসএমডব্লিউ