যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত চুক্তির আওতায় কাতারের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভ্রমণ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্যতম উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।

তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার আগের মতো গড়ে তুলতে আরো সময় প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ।

মঙ্গলবার শেষ হয় উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সম্মেলন।

সম্মেলন শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্মেলনে কাতারের সঙ্গে উপসাগরীয় অন্যান্য দেশের যে চুক্তি হলো, তার আওতায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাতারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং শক্তিশালী করতে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত ।

গারগাশ বলেন, ‘কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যসহ ভ্রমণ বিষয়ক যে সব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলো তুলে নিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এই সময়সীমার(একসপ্তাহ) মধ্যেই সম্ভব বলে মনে করি আমি।’

তবে পাশাপাশি তিনি আরো জানান, বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুত শুরু করা গেলেও দেশটির সঙ্গে একটি আস্থাপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপণে আরো সময়ের প্রয়োজন।

এ বিষয়ে তুরস্ক এবং ইরানের সঙ্গে কাতারের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলো খুব দ্রুত সমাধানযোগ্য আবার কিছু রয়েছে যেগুলো সমাধান করতে সময় প্রয়োজন। আমাদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ার শুরুটা খুব চমৎকার হয়েছে….কিন্তু এখনও কিছু বিষয় রয়ে গেছে যেগুলো পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’

এদিকে সম্মেলন শেষে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভরকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, পুরোনো সব তিক্ততা ভুলে সৌদি আরব এবং তার মিত্রদেশগুলো কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করতে আগ্রহী।

আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলোর প্রধান শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলে ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে যাবতীয় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির মিত্রভাবাপন্ন তিনটি দেশ - সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর।

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলে উদ্ভুত এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নিরসনে এই সংকটে এতদিন কাতারের পক্ষে মধ্যস্থতা করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং উপসাগরীয় দেশ কুয়েত।

এই মধ্যস্থতার ফলেই চলতি বছর ৫ জানুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে শুরু হওয়া জিসিসি সম্মেলনে কাতারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে সম্মত হয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলো।

সম্মেলনে কাতারের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বন্ধ করা, কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করা, মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক ঘণিষ্ঠতা কমানো সহ ১৩ টি শর্ত আরোপ করে সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলো।

এই শর্তগুলোর বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি দেশটির ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে বলেন, ‘জঙ্গীবাদ মোকাবেলা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত আমাদের পক্ষে যতখানি সহযোগীতা করা সম্ভব, তা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

‘তবে ইরান এবং তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই চুক্তি কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

সূত্র: আলজাজিরা।

এসএমডব্লিউ