• করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ভ্যাকসিন আমদানি করবে না ইরান
• সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন
• ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনে করোনা বিপর্যয় থাকতো না 
• দেশে তৈরি ভ্যাকসিনে করোনা মোকাবিলার আশা তেহরানের
• পারমাণবিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরা না ফেরায় ইরানের তাড়া নেই

যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মধ্যপ্রাচ্যে এ দুই দেশের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। শুক্রবার দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে ইরানের এই নেতা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের ভ্যাকসিন দেশে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইরানের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি এবং এখন প্রকাশ্যে বললাম।’

‌‌যুক্তরাষ্ট্র যদি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারতো, তাহলে তাদের নিজ দেশে এ ধরনের করোনাভাইরাস বিপর্যয় ঘটতো না।

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

মধ্যপ্রাচ্যে নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইরান। স্থানীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনাভাইরাসের 
প্রথম একটি ভ্যাকসিন গত মাসের শেষের দিকে মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ভ্যাকসিন আমদানি করতে না পারলেও দেশীয় ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস মহামারিকে হারাতে সহায়তা করবে বলে দাবি করেছে ইরান।

স্থানীয় বিজ্ঞানীদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, অন্যান্য বিশ্বস্ত উৎস থেকে ইরান ভ্যাকসিন আমদানি করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞায় ধুকতে থাকা ইরানের সঙ্গে মিত্র দুই দেশ রাশিয়া এবং চীনের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। 

১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে দূষিত রক্তের পৃথক দুই কেলেঙ্কারির ঘটনা উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ‘আমি সংক্রমিত রক্তের ইতিহাসের কারণে ফ্রান্সের ব্যাপারেও আশাবাদী নয়।’

টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ২০১৫ সালের ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরা না ফেরার বিষয়ে ইরানের কোনও তাড়া নেই বলে মন্তব্য করেন খামেনি। তবে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানান তিনি।

‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তিতে ফিরে আসার তাগিদ দিচ্ছি না বা তাড়াহুড়ো করছি না। তবে আমাদের যৌক্তিক দাবি হলো- নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া। এই নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’

২০১৮ সালে বৈশ্বিক এই পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চিরবৈরী সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানার লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ওই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান চুক্তির শর্ত মানছে না অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।

চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে দফায় দফায় বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। 

দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরান প্রতিনিয়ত এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে আসছে।

গত সপ্তাহে দেশটির ভূগর্ভস্থ একটি স্থাপনায় নতুন করে বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ শুরু করে ইরান। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের মজুদ ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি।

সূত্র : রয়টার্স।

এসএস