• ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তপ্ত বছর ২০২০
• আর্কটিক অঞ্চলে রেকর্ডসংখ্যক দাবানল
• সাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের গড় তাপমাত্রাও ছিল অনেক বেশি
• আর্কটিক সাগরের বরফও উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে গেছে
• বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ২০২১ সালে নতুন মাইলস্টোনে পৌঁছাবে

যৌথভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বছর ছিল ২০২০। বছরের পুরোটা সময় জুড়েই ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এর ফলে আশঙ্কাজনক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্কটিক অঞ্চলে রেকর্ডসংখ্যক দাবানল এবং আটলান্টিক অঞ্চলে ২৯টি ঝড়ের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। এরপরও বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাও এক নতুন রেকর্ড। শিল্পায়ন-পূর্ববর্তী যুগ অর্থ্যাৎ ১৮৫০-১৯০০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে গ্রহের তাপমাত্রা ছিল এক দশমিক ২৫ সেলসিয়াস বেশি।

২০২০ সালের বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে কেবল ২০১৬ সালের তাপমাত্রার মিল রয়েছে। কিন্তু সেই বছর এল নিনো’র কারণে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তবে এল নিনো ছাড়া তাপমাত্রা এতোটা বেশি হওয়ায় এটা বলাই যায় যে- ২০২০ সালই হচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণ বছর।

বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন, তাপমাত্রা কমাতে জরুরি কোনো পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ হবে ‘অন্ধকার’।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সি৩এস) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ তাপমাত্রার দিক থেকে গত ছয় বছরই ছিল রেকর্ড উষ্ণ বছর। এছাড়া গড় তাপমাত্রার তুলনায় গতবছর ইউরোপ এক দশমিক ছয় সেলসিয়াস বেশি উষ্ণতা দেখেছে। পাশাপাশি জুলাইয়ের শেষ ও আগস্ট মাসের প্রথম নাগাদ পশ্চিম ইউরোপে আঘাত হানে উষ্ণ বাতাস।

২০২০ সালে আর্কটিক ও সাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের গড় তাপমাত্রাও ছিল অনেক বেশি। এখানে সদ্যসমাপ্ত বছরের তাপমাত্রা ছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৩ সেলসিয়াস বেশি, আবার কিছু কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৬ সেলসিয়াসেরও বেশি। এর ফলে অনেক বেশি দাবানল হয়েছে এবং আর্কটিক অঞ্চলের মধ্যেই কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়েছে রেকর্ড হারে। আর্কটিক সাগরের বরফও উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে গেছে। আবার জুলাই ও অক্টোবর মাসে বরফ বৃদ্ধির আশা করা হলেও আসলে তা বেড়েছে খুবই কম পরিমাণে।

সি৩এস’র পরিচালক কার্লো বুয়োনটেমপো বলেন,‘আর্কটিকে অপ্রত্যাশিতভাবে উত্তাপ ছড়ানোর কারণে ২০২০ সালকে বেশ আলাদাভাবেই মনে রাখা যাবে। এমনকি তাপমাত্রার দিক দিয়ে গত এক দশক রেকর্ডের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। আর তাই প্রকৃতির বিরূপ আচরণ থেকে বাঁচতে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ইউরোপীয় কমিশনে ম্যাথিয়াস পেটসচক বলেন,‘২০২০ সালের প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ এটাই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। এটা (কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা) খুব কঠিন কাজ, কিন্তু এর ফল খুব বড়।’

বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এমনকি করোনা লকডাউনের কারণে কার্বন নিঃসরণ কিছুটা কম হলেও সেটাকে ‘‘ক্ষণস্থায়ী’’ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

কোপার্নিকাস অ্যাটমোস্ফেয়ার মনিটরিং সার্ভিসের পরিচালক ভিনসেন্ট-হেনরি পিউচ বলেন,‘যতক্ষণ না আমরা বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়তেই থাকবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হবে।’

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের প্রকাশ করা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ২০২১ সালে নতুন মাইলস্টোনে পৌঁছে যাবে। যার ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হবে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

টিএম