অত্যাধুনিক ইউরেনিয়াম মেটাল তৈরির কাজ শুরু করেছে ইরান
পরমাণু চুক্তি পুনরায় কার্যকর করা নিয়ে পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনা ও টানাপোড়েনের মধ্যেই ২০ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ধাতব বা ‘সিলিকন ফুয়েল প্লেট’ তৈরির কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে ইরান। পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কে বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজেম গরিবাবাদি।
তিনি বলেছেন, ২০ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ধাতব বা ‘সিলিকন ফুয়েল প্লেট’ তৈরির কাজ শুরু করার কথা ৯ দিন আগে আইএইএ’কে জানানো হয়েছে এবং সেদিন থেকেই এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গরিবাবাদি বলেন, এই ফুয়েল প্লেট সম্পূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে তেহরানের পরীক্ষামূলক রিঅ্যাক্টরে কাজে লাগানো হবে। তিনি বলেন, সিলিকন ফুয়েল হচ্ছে অত্যাধুনিক পরমাণু জ্বালানি যা উৎপাদনের প্রযুক্তি বিশ্বের হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ রপ্ত করেছে।
ইরানের এই কূটনীতিক জানান, প্রায় তিন মাস আগে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম দিয়ে এই প্লেট তৈরি করার গবেষণা শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ শতাংশ হারে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে একটি সিলিকন ফুয়েল প্লেট উৎপাদন করা হবে।
বিজ্ঞাপন
গরিবাবাদি বলেন, নতুন এই পারমাণবিক জ্বালানি রেডিও অ্যাকটিভ ওষুধের গুণগত মান ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। সেইসঙ্গে পারমাণবিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করে তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ইরান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হবে।
পরে আইএইএ’র বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, ‘তেহরানের পরীক্ষামূলক পরমাণু চুল্লিতে ব্যবহার করার জন্য ইরান শতকরা ২০ ভাগ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে ধাতব প্লেট তৈরি করবে বলে আইএইএ’কে জানিয়েছে।’
২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর ফলে পামাণবিক বোমা প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম মজুতের ক্ষেত্রে রাশ টানতে বাধ্য হয় রুহানির প্রশাসন। এছাড়া ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সে দিকেও নজর রাখে জাতিসংঘ।
কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়। এমনকি রাশিয়া থেকে সাহায্য পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় দেশটির।
চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ইরান হুমকি দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা না তুললে ইউরেনিয়ামের মজুত ফের বাড়ানো হবে। সে অনুযায়ী আগের চেয়ে ইউরেনিয়ামের মজুত কয়েক গুণ বাড়িয়েছে তেহরান। এছাড়া জাতিসংঘকেও পরমাণু কেন্দ্রের তথ্য দিচ্ছে না দেশটি।
টিএম