আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরে তাদের উপকূলে ডুবে যাওয়া একটি নৌকা থেকে ৪৯ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হওয়া এসব মানুষের বয়স ১৬ থেকে ৫০ বছর। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তাদের উদ্ধার করা হয়।

তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী এক টুইট বার্তায় বলেছে, ‌‘বৃহস্পতিবার আমাদের একটি ইউনিট নথিবিহীন ৪৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। গত ৫ জুলাই লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি জমায় তারা।’

টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যাত্রা শুরুর তিন দিনের মাথায় তিউনিশিয়ার জারজিস উপকূল থেকে ৮০ মাইল দূরে নৌকাটি ভেঙে গেলে ওই ৪৯ জন বাংলাদেশি একটি তেলের ট্যাংকারে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে।’

গত ৫ জুলাই তিউনিশিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ঘটে। 

এর আগে, ৩ জুলাই লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে বাংলাদেশিসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং নৌকার অন্য ৮৪ আরোহীকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী।

গত ২৪ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় ২৬৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার সময় ওইদিন তাদের উদ্ধারের তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। 

এর দু’দিন পর ২৭ জুন পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ভেঙে যায়। পরে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী ওই নৌকা থেকে ১৭৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। এ সময় নৌকাটিতে অন্য দুই অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ পাওয়া যায়। নৌকাটি থেকে উদ্ধার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ, মিসর, ইরিত্রিয়া, আইভরিকোস্ট, মালি, নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং তিউনিসিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছিল তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর অন্যতম পথ হয়ে উঠেছে লিবিয়া এবং ইতালি। তবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইতালি হয়ে ইউরোপ যাত্রার চেষ্টা প্রায়ই ব্যর্থ হয়।

চলতি বছরে ইতালি হয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপ যাত্রার পরিমাণ আবারও বেড়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছেন; যাদের বেশিরভাগই সংঘাত এবং দারিদ্র থেকে বাঁচতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু গত বছরের একই সময়ে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পৌঁছানোর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ হাজার ৭০০ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুধুমাত্র লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন ১১ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলছে, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৬০ জন অভিবাসী মারা গেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪০০ জন।