অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পেন্সের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক
• ক্যাপিটল কাণ্ডের পর পেন্সের সঙ্গে প্রথম বৈঠক
• চমৎকার আলোচনা হয়েছে, বলছে সিএনএন
• ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখেও ট্রাম্প-পেন্সের অবস্থান অভিন্ন
• মেয়াদের শেষ সময়টুকু একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতার ঘটনার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১১ জানুয়ারি) ওভাল অফিসে তারা বৈঠক করেন বলে জ্যেষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
এর আগে সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত (ইমপিচ) করার প্রস্তাব উত্থাপন করে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। ক্ষমতার মাত্র ৯ দিন বাকি থাকতে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উন্মত্ত জনতাকে ‘অভ্যুত্থানে প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কংগ্রেসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ভোট হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষমতা থেকে ট্রাম্পকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া ডেমোক্র্যাটদের অব্যাহত চাপের মুখে ট্রাম্প ও পেন্স উভয়ে অভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।
তাদের বৈঠকের বিষয়ে প্রশাসনিক ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন আরও জানায়, ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহে ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার পর উভয়ের এটি প্রথম বৈঠক।
বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ওভাল অফিসে হওয়া এই বৈঠকে ট্রাম্প ও পেন্স ক্ষমতার বাকি মেয়াদের শেষ সময়টুকু একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ক্যাপিটলে হামলা ও সহিংসতার ঘটনার ট্রাম্পের ওপর ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স খুবই ক্ষুব্ধ বলে আগে শোনা গিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, পেন্সের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। কিন্তু এই বৈঠকের পর মনে করা হচ্ছে, নতুন করে আর কোনো বিরোধে জড়াতে চান না ট্রাম্প ও পেন্স। ওয়াশিংটন ডিসিতে ১১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তও বৈঠকে নেওয়া হয়।
বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বৈঠকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ২০ জানুয়ারির আগে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছে তার (ট্রাম্প) নেই। ওইদিন জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার মধ্যদিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে।
এছাড়া ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো ইচ্ছেও পেন্সের নেই। বরং তারা উভয়ে মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
গত সপ্তাহে ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতাকারীরা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেন না বলেও একমত হন উভয় নেতা।
ক্যাপিটলে হামলার পর থেকে গত এক সপ্তাহে ট্রাম্প নিজেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখেছিলেন। এসময় তিনি কারও সাথে সাক্ষাৎ করেননি। এর মধ্যে ক্যাম্প ডেভিডে নিজের পূর্ব নির্ধারিত সফরও বাতিল করেন ট্রাম্প।
শেষে ক্যাপিটল কাণ্ডের প্রায় এক সপ্তাহ পর ওভাল অফিসে ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি।
তবে এই বৈঠকও সম্ভবত প্রতিনিধি পরিষদে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিশংসন প্রস্তাবের ফল। ধারণা করা হচ্ছে নিজেকে নিরাপদ রাখতেই পেন্সের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
কংগ্রেসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ভোট হতে পারে। যদি ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের এ প্রক্রিয়া সফল হয়, তাহলে ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দু’বার অভিশংসিত হওয়া একমাত্র প্রেসিডেন্ট।
অভিশংসন প্রস্তাবে বলা হয়, ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতা চালাতে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকটাপন্ন করেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অখণ্ডতাকে হুমকি দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে হস্তক্ষেপ করেছেন।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে গত সপ্তাহে সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা ও সহিংসতা এবং হামলা চালাতে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জোরালো দাবি ওঠে। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের বিল পাস হওয়ার পর এটিকে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ- সিনেটে পাঠাতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অপসারণ করতে হলে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হবে। কিন্তু সিনেটে এই মুহূর্তে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে; যদিও রিপাবলিকানদেরও অনেকেই ক্যাপিটল ভবনের ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এর আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা হয়েছিল। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে সে যাত্রায় রক্ষা পান ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন ও সহিংস হামলার পর করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি মানুষ ২০ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে।
গত রোববার প্রকাশিত এবিসি নিউজ/ইপসোসের জরিপে দেখা যাচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগেই ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পক্ষে জরিপে অংশ নেওয়া ৫৬ শতাংশ আমেরিকান।
তবে ওই জরিপে যারা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পক্ষে, তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশই ডেমোক্র্যাট সমর্থক। বাকিদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ নিরপেক্ষ এবং ১৩ শতাংশ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানের সমর্থক।
জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের ওই হামলার জন্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছেন ৬৭ শতাংশ মানুষ। যেই হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।
টিএম