ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই বুধবার স্বল্পমাত্রার নৌ ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া করল ইরানের সেনাবাহিনী। বুধবার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন চ্যানেল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শত্রুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধে’ ব্যবহারের জন্য কয়েক বছর আগে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প শুরু করেছিল ইরান। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একক দেশ হিসেবে ইরানের সংগ্রহশালায় স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্ব অবশ্য ইরানের এই মিসাইল প্রকল্পকে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদেশগুলোর বিশ্বাস,  ইরান তার চলমান পারমাণবিক প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প জারি রেখেছে।

ওমান উপসাগরে দু’দিনব্যাপী এই সামরিক মহড়ায় অংশ নেয় হেলিপ্যাড সমৃদ্ধ ইরানের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ মাকরান এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ জাহাজ জারেহ।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানি, অর্থাৎ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৬ স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। এই চুক্তির আওতায় পরমাণু প্রকল্পের কাজ সীমিত করতে সম্মত হয় ইরান; পরিবর্তে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারেও সম্মতি জানায় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলো।

কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র সরকার উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই সরে দাঁড়ায় চুক্তি থেকে এবং ইরানের ওপর পুরোনা নিষেধাজ্ঞাগুলো কঠোর করার পাশাপাশি আরোপ করে নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে ইরানও আবার নতুন উদ্যমে শুরু করে পরমাণু প্রকল্প।

পরমাণু চুক্তি থেকে ‍যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপসাগরে মার্কিন সেনাবহিনী এবং ইরানের সেনাবাহিনীর মধ্যে একাধিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলোর সঙ্গেও দ্বন্দ্ব বেড়েছে ইরান সরকারের।

কয়েকদিন আগে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্যদের হাতে দক্ষিণ কোরিয়ার ট্যাঙ্কার জাহাজ আটকের ঘটনাটি এই দ্বন্দ্বের সর্বশেষ উদাহারণ হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাংকগুলোতে জব্দ অবস্থায় পড়ে থাকা রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের অর্থ তুলতে পারছে না ইরান।

এর আগে ২০১৯ সালে স্টেনা ইম্পেরো নামে ব্রিটেনের একটি ট্যাঙ্কার জাহাজ আটক করেছিল ইরান। দু’সপ্তাহ পর জিব্রাল্টার প্রণালীতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ইরানের একটি ট্যাঙ্কার জাহাজ আটক করলে স্টেনা ইম্পেরো জাহাজটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ