‘বাংলাদেশের বায়ু দূষিত’ মর্মে আবেদন করায় বসবাসের জন্য অস্থায়ী অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশের এক নাগরিককে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন দেশটির আদালত। আদালতের আবেদনে ওই ব্যক্তির আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তার মক্কেলের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, বাংলাদেশে পাঠালে তার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ফ্রান্সের বোর্দো শহরের একটি আদালতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের আবেদন এবং রায় ফ্রান্সে প্রথম বলে জানিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশির আইনজীবী ল্যুদভিক রিভেরি।

তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে- এই প্রথম ফ্রান্সের কোনো আদালত তার রায় দেয়ার সময় পরিবেশগত বিষয়টি বিবেচনায় এনেছেন। বাংলাদেশের বাতাসের বর্তমান অবস্থায় সেখানে গেলে আমার মক্কেলের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে, তা অনুধাবন করতে পেরেই এ রায় দিয়েছেন আদালত।

ইয়েল এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বায়ুর বিশুদ্ধতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের দেশগুলোর যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯ নম্বরে। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাতাসের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে তাতে দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির যে পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের বাতাসে তা ছয়গুণেরও বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে শুধু বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মারা গেছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ জন মানুষ। তাদের দেহে অন্য কোনো রোগের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

রিভেরি জানান, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির জন্য যে ওষুধ তার মক্কেল ব্যবহার করেন, তা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না এবং রোগের প্রকোপ বেড়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে যেসব যন্ত্রের প্রয়োজন হয় সেগুলো বাংলাদেশের হাসপাতালে অত্যন্ত সীমিতসংখ্যক বলে আদালতে আবেদন করেছিলেন তারা। রায় দেয়ার সময় তা আমলে নিয়েছেন আদালত।

আবেদনে বলা হয়, ফ্রান্সে আসার পর ওই বাংলাদেশির শ্বাস-প্রশ্বাসগত শারীরিক ক্ষমতা বা রেসপিরেটরি ক্যাপাসিটিরও উন্নয়ন হয়েছে। ২০১৩ সালে তার রেসপিরেটরি ক্যাপাসিটি ছিল ৫৮ শতাংশ, ২০১৮ সালে তা উন্নীত হয়েছে ৭০ শতাংশে।

ওই ব্যক্তির বাবাও শ্বাসকষ্টের কারণে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন- এ তথ্যও আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়ে রিভেরি বলেন, ‘সব বিষয় আমলে নিয়ে আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বাংলাদেশে আমার মক্কেলকে ফেরত পাঠানোর মানে হলো তাকে মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া। শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বাড়লে মৃত্যু্ এড়ানো প্রায় অসম্ভব।’

ভয়ভীতি ও হুমকির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ফ্রান্সে আশ্রয় নেয়া ওই ব্যক্তি বাস করেন ফ্রান্সের তুলুস শহরে; তারপর একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের চাকরি নেন। ২০১৫ সালে তাকে অস্থায়ী বসবাসের জন্য অনুমতি দিয়েছিল ফ্রান্স সরকার। আদালতের রায়ের পর এখন থেকে স্থায়ীভাবে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি পেলেন ওই ব্যক্তি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

এসএমডব্লিউ