ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ভয়াবহ রকম বিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। ট্রাম্প প্রশাসনের অপমানজনক বিদায় প্রমাণ করেছে, বলপ্রয়োগ, বর্ণবাদ ও আইন লঙ্ঘনের পরিণতি ভালো হয় না।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানী তেহরানে এক বক্তৃতায় একথা বলেন প্রেসিডেন্ট রুহানি।

তিনি বলেন,‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিজয় অনুভব করার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বিশাল ব্যর্থতা ও বিভক্তি প্রত্যক্ষ করছে ইরানি জনগণ।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্ববাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ‘স্বৈরশাসকের’ পতনের ‘অভূতপূর্ব ঘটনা’র সাক্ষী হতে যাচ্ছে।

হাসান রুহানি বলেন,‘আমরা কেবল আমেরিকার একটি প্রশাসনের পতন দেখছি না বরং একইসঙ্গে ইরানের মতো একটি দেশের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ নীতির করুণ পরিণতি দেখতে পাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়লেন তিনি।

ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার প্রায় আড়াই শতাব্দী আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হলেন।

বুধবার ভোটাভুটিতে ২৩২-১৯৭ ভোটে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করেন ডেমোক্র্যাটরা। ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও এসময় ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। এখন তার ভাগ্য ঝুলছে সিনেটের হাতে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প।

গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। কংগ্রেসের যৌথ ওই অধিবেশনে সেদিন জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল।

একপর্যায়ে ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। হামলাকারীদের অনেকেই ছিল সশস্ত্র। ভেতরে ঢুকে সিনেট হলে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা।

শুধু তা-ই নয়, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার কার্যালয়ও তছনছ করে তারা। হামলা-সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন পাঁচজন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৬ জানুয়ারি একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এই ঘটনার পর ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়া অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোরেশোরে মাঠে নামে ডেমোক্র্যাটরা।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন।

শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।

টিএম