আক্রান্ত কাবুল বিমানবন্দর
আফগানিস্তানের বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান কাবুলে প্রবেশের পর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। রোববার দেশটির রাজধানীতে তালেবানের বিদ্রোহী ঢুকে পড়ার পর সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মী এবং নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানী কাবুল বিমানবন্দর— যেখানে বিদেশি কূটনীতিক, কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আফগানরা পালিয়েছেন, সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানজুড়ে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তড়িৎগতির দখল অভিযানের পর ক্ষমতা কীভাবে হস্তান্তর হবে সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর হাতে উৎখাত হওয়ার দুই দশক পর ফের কাবুলের মসনদে বসার প্রহর গুণছে তালেবান।
বিজ্ঞাপন
দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলেও তালেবানের দু’জন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, কোনও অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে নয়, তারা সরাসরি এবং পূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর চান।
দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের এক নিরাপত্তা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরসহ কাবুলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিমানবন্দরে গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন অবস্থা আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
রয়টার্স বলছে, দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া শত শত আফগান; যাদের অনেকেই মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, অন্যান্য বেসামরিক নারী এবং শিশু কাবুল বিমানবন্দরে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগান সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কাবুল বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আফগান সরকার আমাদের বিক্রি করে দিয়েছে।
তালেবানের আগ্রাসী অভিযানের মুখে রোববার সন্ধ্যার দিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি প্রতিবেশি তাজিকিস্তানের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাজিকিস্তানে চলে গেছেন।
তবে নিরাপত্তার কারণে আশরাফ গনি কোথায় যাচ্ছেন সে ব্যাপারে যেকোনও ধরনের তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
আশরাফ গনির পাশাপাশি আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। তবে আফগান এই ভাইস প্রেসিডেন্ট কোন দেশের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন সেবিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কোনও তথ্য জানা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর দুই দশকের যুদ্ধ শেষে আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে যাচ্ছে তালেবানের। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার প্রাণঘাতী হামলার জবাবে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো।
দুই দশকের যুদ্ধ শেষে দেশটি থেকে পশ্চিমা সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ক্ষমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তালেবান। মাত্র ১০ দিনের তড়িৎগতির অভিযানে দেশের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ২৮টির রাজধানীর দখল নেওয়ার পর রোববার কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই কাবুলে পৌঁছায় তালেবান।
দেশটির বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী ক্ষমতার পূর্ণ হস্তান্তরের দাবি তুললেও আফগান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মিরজাকাওয়াল বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
রোববার সকালের দিকে কাবুলের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে; যখন তালেবানের যোদ্ধারা রাজধানী এই শহরের প্রত্যেকটি প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তা ও জানমালের ক্ষতি বিবেচনায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে আফগান সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় তালেবান।
তারা বলেছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে অতীতের কট্টর ইসলামি বিধি-বিধান শিথিল করার অঙ্গীকার করেছে তালেবান। তালেবানের মধ্যস্থতাকারী সুহাইল শাহিন আফগানিস্তানে বিবিসির প্রতিনিধি ইয়ালদা হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালেবানের শাসনাধীনে কাবুলের জনগণের জীবন নিরাপদ থাকবে বলে তাদের দেওয়া আশ্বাস বিবিসিতে প্রচারের অনুরোধ জানান।
সুহাইল শাহিন বলেন, আমরা আফগানিস্তানের জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে, তাদের সম্পত্তি এবং জীবন নিরাপদ। কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। আমরা জনগণ এবং এই দেশের সেবক।
এসএস