ব্রিটিশ সেনাপ্রধান নিক কার্টার বলেছেন, বিশ্বের উচিত তালেবানদের নতুন সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়া। হয়তো দেখা যাবে, পশ্চিমারা কয়েক দশক যাদের জঙ্গি বিবেচনা করছে তারা (তালেবান) আরও কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন আচরণ করছে এবং বদলে গেছে।

এক তালেবান নেতাও বুধবার বলেছেন, গত ২০ বছর ধরে তাদের শীর্ষ নেতারা লুকিয়ে কিংবা আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু তারা এখন আর লুকিয়ে থাকবেন না। গোপন জীবনযাপন ছেড়ে প্রকাশ্যে আসবেন। ইতোমধ্যে তালেবানের অনেক নেতা অবশ্য আফগানিস্তানে ফিরেছেন। 

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্রিটেনের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ নিক কার্টার বলেছেন, তিনি আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বুধবার তালেবান নেতাদের সঙ্গে কারজাই বৈঠক করেছেন বলেও জানিয়েছেন কার্টার।

কার্টার বলেন, ‌‘আমাদের ধৈর্য ও মানসিক স্থিতি রাখতে হবে। তাদেরকে সরকার গঠনের জন্য আমাদের সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার সময় দিতে হবে। হতে পারে, যে তালেবানকে ১৯৯০ এর দশকে মানুষ দেখেছে এই তালেবান তার থেকে ভিন্ন।’

ব্রিটিশ সেনাপ্রধান বলেন ‘যদি আমরা তাদের সুযোগ দিই তাহলে হয়তো ভালোভাবে দেখতে পাব, এই তালেবান অবশ্যই কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তালেবান সমগোত্রীয় সংগঠন নয়, তালেবান হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন উপজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী, যেখানে গোটা আফগানিস্তানের মানুষ আছে।’

কার্টার বলেন, তালেবানরা মূলত ‘দেশের ছেলে’ যারা তাদের ‘পশতুনওয়ালি’ জীবনপ্রণালীর অধীনে জীবনযাপন করে। পশতুনওয়ালি হলো পশতু জনগণের ঐতিহ্যবাহী জাতিগত জীবনধারা ও আচরণবিধি। তারা এটাই মানে।’ 

ব্রিটিশ সেনাপ্রধান বলেন, ‘এটা হতে পারে তালেবান আরও কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন আচরণ করছে। তাদের সরকার হবে কম দমনমূলক। যদি আপনি এই মুহূর্তে তালেবান যেভাবে কাবুল শাসন করছে তা লক্ষ্য করেন তাহলে এর ইঙ্গিত পাবেন।’

তবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রবীণ কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। যেমন আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করে আসা ও সামরিক জোট ন্যাটোর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চার্লি হারবার্ট স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‌‘তাদের (তালেবান) এই মিষ্টি ও সহজ সরল কথায় মানুষের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত হবে না।’

তার মতে, ‘তালেবানের এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দরকার। কারণ তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। তাই তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য মরিয়া। চীন, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের থেকে তাদের স্বীকৃতি প্রয়োজন। এ কারণে তারা নারীদের সমানাধিকার দেওয়ার মতো আকর্ষণীয় শব্দ ব্যবহার করছে এবং আগামীতেও এটা করবে।

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার দাবি, তালেবান যে বদলে গেছে বা তাদের মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। তারা অপেক্ষা করছে, কখন আমরা (বিদেশিরা) কাবুল ছাড়ব। এরপর তাদের হাতে রক্তক্ষরণ হবে অসংখ্য মানুষের। কারণ তখন সাংবাদিক বা বিশ্বের কেউ এটা দেখার জন্য সেখানে থাকবে না।’ 

এএস/জেএস