সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ভারতের দুই সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী এবং পার্থ দাশগুপ্তের চ্যাট ফাঁসের ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এবং দেশটির মিডিয়া উপমহাদেশের শান্তি বিনষ্ট করার ‘ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’।

সোমবারের এক টুইটবার্তায় ২০১৯ সালে নির্বাচনে জয়ের জন্য বিজেপি পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে ব্যবহার করেছিল বলেও অভিযোগ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

তবে তার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুখপাত্র এবং ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য সৈয়দ জাফর ইসলাম।

সোমবার দু’টি টু্ইট বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের খাইবার-পাখতুনওয়া প্রদেশের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনী যে হামলা করেছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ‘অগণতান্ত্রিক’ ভারতীয় সরকার তা নির্বাচনে জয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে সংবাদ পেয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ভারতের ডানপন্থী টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী এবং ভারতের ব্রডকাস্ট সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী পার্থ দাশগুপ্তের একটি বার্তালাপ ফাঁস হয়। বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের তিনদিন আগে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছিলেন তারা।

মুম্বাই পুলিশের জিম্মায় থাকা ওই কথাবার্তার রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের বালাকোট শহরে হামলা ঘটার আগে থেকেই এ বিষয়ে জানতেন।

হোয়াটস অ্যাপের ট্রান্সক্রিপ্ট বলছে, ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ব্যবহার করে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে কথাবার্তা বলেছিলেন রিপাবলিকান টিভির উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী এবং ভারতের ব্রডকাস্ট সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী পার্থ দাশগুপ্ত।

তাদের মধ্যে যে কথাবার্তা হয়-

অর্ণব: বড় কিছু হতে যাচ্ছে। এটা ঘটলে তিনি (নরেন্দ্র মোদি) নির্বাচনে জিতে যাবেন।

পার্থ: আঘাত? নাকি তার চেয়েও বড় কিছু?

অর্ণব: সাধারণ আঘাতের চেয়ে বড় কিছু তো অবশ্যই। ভারতের পাশাপাশি কাশ্মিরের জন্যও এটা বড় ব্যাপার। সরকার এমনভাবে পাকিস্তানে আঘাত করবে যে তাতে একদিকে সরকারের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের মানুষও খুশি হবে।

ফাঁস হওয়া এই কথাবার্তাকে ‘ভারতের সরকারের সঙ্গে দেশটির সংবাদমাধ্যমের নোংরা চক্রান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে সোমবার এ সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন বলেন, ‘এ ধরনের চক্রান্ত আমাদের উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দু’দেশকে এমন এক সংকটের কিনারায় নিয়ে যাবে, যে সেখান থেকে উত্তরণের আর পথ থাকবে না।’

টুইট বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘সম্প্রতি ফাঁস হওয়া আলাপে ভারতের দুই যুদ্ধপ্রিয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মোদি সরকারের আঁতাতের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ কোনো অ্যাডভেঞ্চারের বিষয় নয়। নির্বাচনে জয়ের জন্য এ পন্থা ব্যবহার করা হলে তা উপমহাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে।’

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ের অস্ত্র হিসেবে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর চালানো হামলা বা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ব্যবহার করেছিল বিজেপি।

টুইটবার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘বালাকোট ঘটনার প্রেক্ষিতে বড় ধরনের কোনো সংকট যেন না হয় প্রেক্ষিতে পাকিস্তান বরাবরই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে, অন্যদিকে মোদি সরকার তার দেশের জনগণকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছে।’

তবে বিজেপির মুখপাত্র সৈয়দ জাফর ইসলাম অবশ্য ইমরান খানের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, পাকিস্তান একটি ‘সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা’ এবং ভারত কখনও বালাকোটের ঘটনাকে ২০১৯ সালে নির্বাচনে জয়ের জন্য ব্যবহার করেনি।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল আদর্শগতভাবে জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয়তাবাদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই বিষয়টিতে অতীতে যেমন আমরা কখনও আপোস করিনি ভবিষ্যতেও কখনও করব না। পাশাপাশি এও সত্য যে আমরা নির্বাচনে জয়ের হাতিয়ার হিসেবেও জাতীয় নিরাপত্তাকে ব্যবহার করব না।’

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের বালাকোটে জইশের প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী।

তবে পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতের সেনাসদস্যদের ওপর হামলা করেছিল বলে যে অভিযোগ ভারত জানিয়েছে- তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।

বালাকোটে হামলার একদিন পর পাকিস্তানের বিমানবাহিনী ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজকে ভূপাতিত করে এবং এর পাইলটকে আটক করে। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতালাভের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মির নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব চলছে প্রতিবেশী এ দু’দেশের। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দুই দেশের নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ করার মূল কারণও কাশ্মিরের ওপর দখল প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা।

সূত্র: আলজাজিরা।

এসএমডব্লিউ