জেরুজালেমেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস: অ্যান্টনি ব্লিনকেন
ইসরায়েলের জেরুজালেমেই যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস রাখা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে এক শুনানির আয়োজন হয়। সেখানে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ ব্লিনকেনের কাছে জানতে চান, ‘জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী – এ বিষয়ে কি আপনি একমত? আর একটি প্রশ্ন হলো- জেরুজালেমে আমাদের যে দূতাবাসটি রয়েছে, সেটি ওখানে রাখার ব্যপারে কি আপনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?’
বিজ্ঞাপন
জবাবে ব্লিনকেন বলেন,‘ হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে আমি একমত এবং জেরুজালেমে আমাদের দূতাবাসটি রাখার বিষয়ে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ওই বছরই তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে দেশটির দূতাবাস স্থানান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দশকজুড়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাত চলছে, তার কেন্দ্রে অবস্থান করছে জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল জেরুজালেম দখল করার পর থেকে ফিলিস্তিন সরকার বরাবর পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে।
শুনানিতে ব্লিনকেন আরো বলেন, ‘তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্বই আসলে ওই অঞ্চলে বর্তমানে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। অর্থাৎ একটি গণতান্ত্রিক, ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এবং ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।’
‘যদি আমরা বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করি- সেক্ষেত্রে সেখানে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে এ (সংঘাতের) বিষয়ে বর্তমানে আমাদের এগোনোর সুযোগ তেমন নেই। এখন একটি বিষয়ই আমরা মনযোগ দিতে পারি এবং তা হলো- সেখানকার পরিস্থিতি যেন আরো বিগড়ে না যায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।’
ফিলিস্তিন সরকারের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করা হলেও ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভুত সাংবাদিক লামা খাতের অ্যান্টনি ব্লিনকেনে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সবকিছুই পরিবর্তন হবে, শুধু যে বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকবে তা হলো ইসরালের প্রতি আনুগত্য।’
গত চার বছর ইসরাইল সরকারকে সরাসরি দ্বিধাহীনভাবে সমর্থন করে গেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে প্রথমে ফিলিস্তিন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিয়ে আসা আর্থিক সহযোগীতা বন্ধ করে ট্রাম্প প্রশাসন, পরে জাতিসংঘের শরনার্থী সহযোগীতা সংস্থাতেও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়; ফলে খাদ্য, শিক্ষা ও জীবনযাপণের মৌলিক উপকরণ সংগ্রহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় ফিলিস্তিনের লাখ লাখ অধিবাসীর।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জনমত উপেক্ষা করে জেরুজালেম এবং গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলের অধিকারকে স্বীকৃতিও দেয় ট্রাম্প প্রশাসসন। বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসবাস করছেন প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলী এবং এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যমগুলো।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, ক্ষমতাগ্রহণের পর ট্রাম্পের পূর্বে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান ছিল, তিনি সেই ধারবাহিকতাই রক্ষা করবেন। তবে গোলান উপত্যকা ইসরায়েলের বলে যে স্বীকৃতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়ে গেছেন, বাইডেন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন- এমন সম্ভাবনাও কম বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ