যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন-কমলা হ্যারিসের শপথ অনুষ্ঠানে ঐক্য ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেছেন মার্কিন তরুণ কবি আমান্ডা গোরম্যান।

২২ বছর বয়সী এই কবি বুধবার বাইডেনের  শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ, যারা টেলিভিশনে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন, তাদের উদ্দেশ্যে ‘যে পাহাড়ে আমরা উঠছি’ বা ‘দি হিল উই ক্লাইম্ব’ শিরোনামে নিজের লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক রেকর্ড বলছে, এ যাবৎ দেশটির প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যত কবি উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে আমান্ডা গোরম্যানই সর্বকনিষ্ঠ। পাঁচ মিনিটব্যাপী কবিতার শুরুর পংক্তিটি ছিল, ‘যখন দিনের শুরু হয়, আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি- এই শেষ হতে না চাওয়া আবছায়া অন্ধকারে কোথায় আলো খুঁজে পাবো?’

চলতি মাসের শুরুতে দেশের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনাও কবিতায় উল্লেখ করেন তিনি; বলেন, ‘আমরা এমন শক্তি দেখেছি, যা আমাদের দেশকে সবার মধ্যে বিলিয়ে না দিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে, গণতন্ত্রকে বিলম্বিত করাতে পারলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে।’

‘এমন চেষ্টা প্রায় সফলও হয়েছিল। গণতন্ত্র হয়তো সময়ে সময়ে দেরিতে আসতে পারে, কিন্তু একে কখনোই স্থায়ীভাবে পরাজিত করা যাবে না,’ নিজের কবিতায় বলেছেন আমান্ডা। কবিতায় আমান্ডা নিজের পরিচয়ে বলেন, “হাড্ডি-চর্মসার কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে যার স্বপ্ন প্রেসিডেন্ট হওয়ার। যার পূর্বপুরুষ ছিল দাস এবং বড় হয়েছে একাকী মায়ের (সিঙ্গেল মাদার) কাছে।”

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ পোয়েট লরিয়েট’ হওয়া আমান্ডা বাইডেনের অভিষেকে কবিতা পড়ে রবার্ট ফ্রস্ট, মায়া অ্যাঞ্জেলু, মিলার উইলিয়ামস, এলিজাবেথ আলেক্সান্ডার ও রিচার্ড ব্লাঙ্কোর মতো কবিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন; এরা সবাই কোনো না কোনো প্রেসিডেন্টের অভিষেকে আবৃত্তি করেছিলেন।

‘আমি সত্যিই আমার শব্দগুলোকে ঐক্য, সহযোগিতা ও একতার বিষয় করতে চাই।’ নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেস নিউজআওয়ার প্রোগ্রামকে এমনটাই বলেন আমান্ডা।

‘আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। ভবিষ্যত সম্পর্কে…আমরা সবাই একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন যদি দেখি, তাহলেই আমাদের শব্দগুলো শ্রুতিমধুর ও পরিশীলিত হয়ে উঠবে।’

অথচ দুই সপ্তাহ আগেও ‘দ্য হিল উই ক্লাইম্ব’ কবিতার চরণ খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল; ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে দাঙ্গা তরুণ এ কবির যাবতীয় জড়তা কাটিয়ে দেয়। বেরিয়ে আসে একের পর এক শক্তিশালী শব্দ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের পাশাপাশি পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই চলছে আমান্ডার কবিতার উচ্ছসিত প্রশংসা। মার্কিন উপস্থাপক ও অভিনেত্রী অপরাহ উইনফ্রে টুইটারবার্তায় লিখেছেন, “আরেক তরুণীর উত্থান দেখে আমি আর কখনোই এত গর্ব অনুভব করিনি।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা মেডিসিন সানস ফ্রন্টিয়ার্সের সাবেক প্রধান জোয়ানে লিউ তার টুইটার অ্যাকাউন্টে আমান্ডার কবিতাটিকে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক মূহুর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ এই অনুপ্রেরণার রেশ থেকে যাবে দীর্ঘ সময়।’

আমান্ডার ‘শক্তিশালী ও শাণিত’ শব্দের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেছেন, ‘দ্যুতি ধরে রাখো আমান্ডা।’

আমান্ডা জানান, যখন তাকে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন তিনি ‘চিৎকার করে উঠেছিলেন, মাথা চক্কর মারছিল’।

উত্তেজনা, আনন্দ, সম্মানের পাশাপাশি ‘খানিকটা আতঙ্কিতও হয়েছিলেন’ তিনি। কবিতা শেষ করতে না পারার আশঙ্কা চেপে বসেছিল। যে বিশাল কাজের ভার বর্তেছে, তা ‘ঠিকঠাকমতো উৎরে যেতে পারবো তো’- এই উৎকণ্ঠা অস্থির করে তুলেছিল তাকে।

১৯৯৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে জন্ম নেওয়া আমান্ডা ১৬ বছর বয়সে রাজ্যটির ‘ইয়ুথ পোয়েট লরিয়েট’ হন। তিন বছর পর হার্ভার্ডে সমাজবিজ্ঞান পড়ার সময় হন ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ পোয়েট লরিয়েট’।২০১৫ সালে তার প্রথম বই ‘দ্য ওয়ান ফর হুম ফুড ইজ নট এনাফ’প্রকাশিত হয়।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ