অভিষেক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আসা ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা গ্যারেজে বিশ্রাম নিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর বুধবার জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে সারা দেশ থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ২৫ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়।

পরদিন বৃহস্পতিবার অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দেখা যায় ন্যাশনাল গার্ডের কয়েক শ’ সদস্য অনুষ্ঠান স্থলের কাছের একটি গাড়ি রাখার গ্যারেজে শুয়ে আছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে এই ছবি ভাইরাল হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন রাজনীতিকরা; যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যের গভর্নর ইতোমধ্যে গভর্নর নিজ নিজ সেনাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুক্রবার ন্যাশনাল গার্ড ব্যুরোর প্রধানকে ডেকে ক্ষমা চেয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি কী করতে পারেন তা জানতে চেয়েছেন।

দেশটির ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন নিজে সেনাসদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ সময় উপহার হিসেবে তিনি সেনাসদস্যদের জন্য হোয়াইট হাউস থেকে বিস্কুট্ নিয়ে যান।

সেনাসদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে ফার্স্টলেডি বলেন, ‘আপনারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে সুরক্ষিত রেখেছেন। আমি আজ এখানে এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ দিতে।’

সেনাদের কার পার্কে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভের ঝড় উঠে। কেউ কেউ বলেন, বদ্ধ পরিবেশে গাড়ির ধোঁয়ায় সেনাসদস্যরা ‍অসুস্থ হয়ে যেতে পারতেন। সেখানে এমনকি পর্যাপ্ত টয়লেটও ছিল না।

কেনো সেনাদের ক্যাপিটল থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল তা নিয়েও পরষ্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই সেনাদের ওই নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গ্যারেজে বিশ্রামরত সেনাসদস্যদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে টুইট করে তারা বলেন, সেনারা চাইলে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাদের কার্যালয়ের কাউচগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

সেনাদের গ্যারেজে বিশ্রাম নেওয়ার ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের আবার ক্যাপিটলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়; কিন্তু তাতেও কয়েকটি রাজ্যের গভর্নরের ক্ষোভ কমেনি।

বিবিসি জানিয়েছে, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস এ ঘটনার পর নিজের রাজ্যের সেনাদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

শুক্রবার ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে এটা প্রস্তুতিহীন একটি মিশন এবং এই মুহূর্তে সবথেকে সঠিক কাজ হচ্ছে তাদের (সেনাদের) বাড়িতে ফিরিয়ে আনা।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ নতুন সেনেটের নেতা চাক ‍শুমার এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন , ‘এ ঘটনা খুবই অবমাননা কর এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ভবিষ্যতে এমনটা আর কখনো ঘটবে না।’

সিনেটর রয় ব্লান্ট জানিয়েছেন, কী কারণে এমন হলো তা জানতে ‘সিনেট রুলস কমিটি’ তদন্ত শুরু করেছে। ইউএস ন্যাশনাল গার্ড এবং ইউএস ক্যাপিটল পুলিশের পক্ষ থেকে শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরুর কথা জাননো হয়।

তারা বলেন, অফ-ডিউটিতে থাকা সেনাদের জন্য হোটেলে বা অন্যান্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেনাদের থাকার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় তারা কংগ্রেস সদস্যদেরও ধন্যবাদ দিয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে প্র্রায় ১৯ হাজার ন্যাশনাল গার্ড নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাবেন; আর সাত হাজার সেনা দায়িত্ব পালনের জন্য ওয়াশিংটনে থেকে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শুক্রবার বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে যে ২৫ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১০০ থেকে ২০০ জন কোভিড-১৯ ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। তবে এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানায় বিবিসি।

এসএমডব্লিউ