বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে টিকাদান শুরু
করোনা টিকা নিচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিজি নাসিমা সুলতানা I ছবি টিভি থেকে নেওয়া
• বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে টিকাদান শুরু
• বুধবার বিকেলে প্রথম পাঁচজন নিয়েছেন এই টিকা
• গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্বে প্রথম টিকাদান শুরু করে যুক্তরাজ্য
• বিশ্বে টিকাদানের হারে সবার ওপরে আছে ইসরায়েল
এক বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের স্বাভাবিক জীবনের গতি থামিয়ে দেয়া মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে টিকাদান শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম দেশ হিসেবে ট্রায়ালের সব ধাপ উতড়ে কার্যকর ও নিরাপদ প্রমাণিত হওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকা মানুষকে দেওয়া শুরু করে যুক্তরাজ্য। একই দিন নিউইয়র্কের এক নার্সকে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের মাধ্যমে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র টিকাদান শুরু করে। দেশটি ফাইজার ছাড়াও মডার্নার টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য যুক্তরাজ্যের আগে সেপ্টেম্বরেই নিজেদের তৈরি স্পুটনিক-৫ টিকার মাধ্যমে দেশে টিকা দেওয়া শুরু করে রাশিয়া। তবে ট্রায়াল শেষ না হওয়া টিকাটির কার্যকারিতা ও সুরক্ষা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। তবে যুক্তরাজ্য শুরু করার পর অন্যান্য দেশেও টিকার অনুমোদন দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশকে নিয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টি দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মূলত ডিসেম্বরেই বেশিরভাগ দেশে টিকাদান শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের পর গত ১৬ ডিসেম্বর টিকা প্রয়োগ শুরু করে কানাডা। দেশটি এর আগেই মডার্না ও ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকার অনুমোদন দিয়েছিল।
ইউরোপ-আমেরিকার পর টিকা প্রয়োগে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ কিছু দেশ।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে ২৩ ডিসেম্বর, সার্বিয়ায় ২৪ ডিসেম্বর, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় ২৬ ডিসেম্বর, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, রোমানিয়া, মাল্টায় ২৭ ডিসেম্বর, ইতালি ও বেলজিয়ামে ২৮ ডিসেম্বর এবং বেলারুশে ২৯ ডিসেম্বর টিকাদান শুরু হয়।
ইউরোপ-আমেরিকার পর টিকা প্রয়োগে এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ কিছু দেশ। এরমধ্যে আমিরাতে ১৪ ডিসেম্বর, সৌদি আরবে ১৭ ডিসেম্বর, কাতারে ২২ ডিসেম্বর, কুয়েতে ২৪ ডিসেম্বর এবং ওমানে ২৭ ডিসেম্বর করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। ফাইজার ছাড়াও চীনের তৈরি টিকার অনুমোদন দিয়েছে আমিরাত।
গত ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রাণহানি নিয়ে ধুকতে থাকা ব্রাজিলে করোনার টিকাদান শুরু হয়। ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি।
চীনের তৈরি সিনোভ্যাকের তৈরি করোনা টিকার অনুমোদন দেওয়ার একদিন পর গত ১৪ জানুয়ারি দেশের মানুষকে ওই টিকা দেওয়া শুরু করে তুরস্ক। সিঙ্গাপুর গত ৩০ ডিসেম্বর টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দিয়ে টিকা দেওয়া শুরুর পর মোট ২৯ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়েছে ইসরায়েল। বিশ্বে দেশের জনগণের শরীরে টিকা প্রয়োগের হারে সবার ওপরে আছে ইসরায়েল।
এদিকে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি করোনায় দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রাণহানি নিয়ে ধুকতে থাকা দেশ ব্রাজিলে করোনার টিকাদান শুরু হয়। গত ১৬ জানুয়ারি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত এবং সেরামের তৈরি টিকা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে ভারত বায়োটেকের তৈরি টিকা দিয়ে ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচির শুরু হয়েছে।
দরিদ্র দেশের মানুষকে হয়তো করোনা টিকার সরবরাহ পাওয়ার জন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। টিকা বিতরণ ও বণ্টন নিয়ে বিদ্যমান ধনী-গরিব বৈষম্য আবারও প্রকটভাবে প্রত্যক্ষ করছে বিশ্ববাসী।
গত বছরের নভেম্বরে করোনার প্রথম একটি টিকা কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্ববাসী আশা দেখতে শুরু করেছিল— এবার হয়তো মহামারি এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু যারা দরিদ্র দেশগুলোতে বসবাস করছেন; তাদের সেই আশার গুঁড়ে বালি। এসব দেশের মানুষকে হয়তো করোনা টিকার সরবরাহ পাওয়ার জন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
করোনাভাইরাসের টিকার অসম নীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব এখন একটি ‘বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে।’
মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার ১১ মাস পরই বিস্ময়করভাবে টিকা নিয়ে সুখবর শোনা গেলেও এর বিতরণ ও বণ্টন নিয়ে বিদ্যমান ধনী-গরিব বৈষম্য আবারও প্রকটভাবে প্রত্যক্ষ করছে বিশ্ববাসী। আফ্রিকার দেশগুলো এখনও টিকা পাওয়ার আশায় বসে থাকলেও কানাডার মতো উন্নত দেশ করোনা এ বছর টিকার যত ডোজের সরবরাহ নিশ্চিত করেছে তা দিয়ে দেশটির প্রতিটি মানুষকে পাঁচবার টিকা দেওয়া যাবে।
গরিব দেশগুলোয় করোনার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আগে ধনী দেশগুলোর কম বয়সী ও স্বাস্থ্যবান লোকজনের টিকা পাওয়াটা মোটেই ঠিক নয়।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক
করোনাভাইরাসের টিকার অসম নীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব এখন একটি ‘বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে।’ ডব্লিউএইচওর এই মহাপরিচালক বলেন, গরিব দেশগুলোয় করোনার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আগে ধনী দেশগুলোর কম বয়সী ও স্বাস্থ্যবান লোকজনের টিকা পাওয়াটা মোটেই ঠিক নয়।
এএস/এসএস